চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় হতদরিদ্রদের ১০টাকা কেজির চাল নিচ্ছেন প্রভাবশালী ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দুস্থ-হতদরিদ্ররা।
জানা গেছে, নাচোল উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের দেয়া তালিকায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কার্ড বিতরণ হয়েছে প্রভাবশালী, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীদের মধ্যে। ৫ বিঘা জমির মালিক থেকে শুরু করে ৩০ বিঘা জমির মালিকের নামেও বিতরণ করা হয়েছে এই চালের কার্ড।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নাচোল উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুলাহার গ্রামের আলহাজ্ব হাফেজ উদ্দিনের ছেলে রাজু আহম্মেদ ৩৫ বিঘা জমি আবাদ করলেও তাকে দেয়া হয়েছে হতদরিদ্রের কার্ড। একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মৃত জানবক্সের ছেলে নুর-নবীর নামেও দেওয়া হয়েছে কার্ড। এলাকাবাসী জানায়, নুরনবী ১৫-২০ বিঘা জমি চাষাবাদ করেন এবং সিংঙ্গাপুরে তার ছেলে চাকুরি করে। একই অভিযোগ রয়েছে মৃত অহির বক্সের ছেলে কেরামত ও কিয়ামতের বিরুদ্ধেও। তারা উভয়ে ৩০ বিঘা জমি চাষাবাদ করেন। এছাড়া ওই গ্রামের মৃত কাঙ্গালু মন্ডলের ছেলে আব্দুর রহমান ২০ বিঘা জমি চাষাবাদ করলেও তিনি পেয়েছেন হত দরিদ্রদের কার্ড।
এছাড়া ওই গ্রামে সরকার দলীয় নেতারা এলাকার প্রভাবশালীদের নামে ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড বিতরণ করেছেন। অন্যদিকে নেজামপুর ইউনিয়নের গোসাইপুর, টিকইল, কাজলকেশর গ্রামে বিত্তবানদের দেয়া হয়েছে ১০টাকা কেজির চালের কার্ড। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষক আব্দুল হাই সুইট, গোসাইপুর গ্রামের ১৩ বিঘা জমির মালিক নজরুল ইসলামের ছেলে একরামুল হক, ৮বিঘা জমির মালিক মালা বক্সের ছেলে মনিরুল, ৭ বিঘা জমির মালিক সাফিউলের স্ত্রী পিয়ারা খাতুনসহ ওই ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারী ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কসবা ও ফতেপুর ইউনিয়নেও ৫০ ভাগ কার্ড রয়েছে চাকুরিজীবী, ডিলার ও তৃণমূল নেতাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের নামে। অন্যদিকে গোমস্তাপুর উপজেলায় অনেক বিত্তবান পেয়েছেন ১০টাকা কেজি দরের চালের কার্ড। গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে একাধিক স্বচ্ছল ব্যক্তিসহ চাকরিরত শিক্ষকরাও পেয়েছেন হতদরিদ্রদের কার্ড। জানা গেছে, কাঞ্চনতলা গ্রামের স্বচ্ছল ব্যক্তি শফিকুল, সাবের আলী, তহরুল ইসলামসহ একই পরিবারের তিনজন পর্যন্ত পেয়েছেন হতদরিদ্রদের চালের কার্ড। শুধু তাই নয় শিক্ষকতা করলেও নিজেদের গৃহিনী ও দিনমজুর দেখিয়ে কার্ড নিয়েছেন কাঞ্চনতলা-১ এর নুরুল ইসলামের স্ত্রী কুলসুম খাতুন এবং তহরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী।
এদিকে বোয়ালিয়া ইউনিয়নে কার্ড প্রদানে অনিয়মের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কাছে ৭০জন দরিদ্র মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ করেছেন কাঞ্চনতলা গ্রামের মৃত বিলাত মন্ডলের ছেলে মো. আমির হোসেন। এই বিষয়ে সংসদ সদস্য মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস জানিয়েছেন, অভিযোগের তদন্ত করে গোমস্তাপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ/০৫