জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারণে শরীয়তপুরে প্রাকৃতিক মধুর চাষ কমে গেছে। জেলার প্রায় ৫ শতাধিক মধু সংগ্রহকারীর পেশা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। আদি পেশা ছেড়ে এসব মধু সংগ্রহকারীরা জীবন ধারণের তাগিদে বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকছেন। প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন কমে যাওয়ায় দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে খাঁটি মধু। সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ভেজাল মধু বাজারজাত করে প্রতারিত করছে সাধারণ ক্রেতাদের।
শরীয়তপুর জেলা একটি কৃষিনির্ভর জেলা। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণ মসলা জাতিয় ফসল ও রবি শস্য উৎপাদন করা হয়। প্রকৃতিক এ ফসল থেকে প্রতি মৌসুমে এ জেলায় প্রচুর পরিমাণ মধু আহরণ কারা হতো। মৌমাছিরা সরিষা, তিল, কালোজিরা, ধনিয়া, মেথিসহ মসলা ও রবি শস্যের ফুল থেকে মধু আহরণ করে থাকে। শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৫ শতাধিক মৌয়াল মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রাকৃতিক মধু উৎপাদনের মৌসুম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মধু উৎপাদন কমে গেছে। প্রকৃতিক মধু সংগ্রহকারীরা পেশা নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। প্রাকৃতিক খাটি মধুর উৎপাদন কমে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মধু বাজারজাত করছে। ভেজাল মধু খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
তেল ফসলে সমৃদ্ধ এ জেলায় প্রচুর পরিমাণ মৌমাছি বাসা বাঁধে ঝোপের মধ্যে, গাছের ডালে, ইমারতের সানশেডে, ঘরের চালে, ব্রিজের তলায়। তুলনামূলক জনসমাগম কম এবং নীরব জায়গাগুলোতেই মৌমাছি বাসা বাঁধে। বিনা মূলধনে পাওয়া এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে জেলার ৬ উপজেলার প্রায় ৩ হাজার মৌয়াল জীবিকা নির্বাহ করে বলে জানায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। ৩-৪ মাসই (ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস) সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায় বলে জানায় মৌয়ালরা। আগে তেল ও মসলা ফসলের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পারতেন একজন মৌয়াল। তীব্র শীত ও প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন আর আগের মত মৌচাক পাওয়া না যাওয়ায় এখন আর আগের মত মধু পাওয়া যায় না বলেও জানায় তারা। ফলে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। আবার যারা এখনও এ পেশায় আছেন, কোনরকমে দিন চলছে তাদের। প্রাকৃতি ভালো মধু বেশি দামে কিনতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না ক্রেতারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ওপর অনৈতিক আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। যে কারণে প্রকৃতিও আমাদের সাথে বিভিন্নভাবে বিরূপ আচরণ করছে। তাই আমরা যে যার অবস্থান থেকে যদি প্রকৃতির ভারসাম্যকে রক্ষা করি, তাহলে আবার ফিরে আসতে পারে প্রকৃতির প্রাকৃতিক পরিবেশ। আমরা পেতে পারি এক সুন্দর নির্মল পৃথিবী।
ফসলে পরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, তেল ও মসলা ফসলের আবাদ বৃদ্ধিসহ কৃষি বিভাগ, বন বিভাগ ও সচেতন পরিবেশপ্রেমীদের পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে দাবি শরীয়তপুরের মৌয়ালদের।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ-০৬