লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অধিকাংশ শিশু এখনও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। অশিক্ষায় বেড়ে উঠছে উপকূলীয় মেঘনা পাড়ের জেলে পল্লীর শিশুরা। ফলে জীবন সাজাতে জীবন বাঁচাতে নেই তাদের উচ্চাশা। জীবন জীবিকার অন্বেষার তাগিদে কখনও রোদে কখনও বৃষ্টিতে ভিজে নরম হাতে শক্ত কাজ করছে তারা।
কথা হয় উপজেলার জালিয়ার চরের ৯ বছরের শিশু রিফাতের সঙ্গে। তার স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল। কিন্তু সংসারে অভাব অনটনের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। বাবার নির্দেশে লেখাপড়া ছেড়ে এখন নদীতে মাছ ধরে সে। রাতদিন জোয়ার ভাটায় মেঘনা নদীতে জাল বেয়ে কাটে তার শৈশব।
রিফাত তৃতীয় শ্রেণীতে কিছুদিন ক্লাস করেছিল। শুধু রিফাত নয়, এমনিভাবে মেঘনা নদীর জেলেপাড়ার শিশু রাছেল (১২), হেলাল (১০), ইকরামসহ (১১) আরও বেশ কিছু শিশুদের দেখা গেছে জাল টেনে মাছ ধরতে।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার শিশুরা ৬ থেকে ৭ বছর বয়স পেরুলেই পরিবারে সহযোগী হিসেবে মাছ ধরার কাজে ঝুঁকে পড়ে। এটাই তাদের প্রধান পেশা। এছাড়া কখনো ধানের ছড়া কুড়ানো, দিনমজুরি করতেও দেখা যায় শিশুদের।
উপজেলার জালিয়ার চর, চর কাচিয়া, চরলক্ষ্মী ও মিয়ারহাট এলাকায় এমন দৃশ্য সবচেয়ে বেশি।
জেলে পরিবারের একাধিক অভিভাবক জানান, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছার কমতি নেই তাদের। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে তারা সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেন না। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ দেওয়ার জন্যই সন্তানদের কাজে লাগাতে হয়। টানাপোড়েনের সংসারে এর বিকল্প আমরা কিছুই ভাবতে পারছি না।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় জানান, 'চরাঞ্চলের শিশুরা যাতে শিশুশ্রম থেকে বেরিয়ে এসে স্কুলমুখী হতে পারে সেজন্য চরবংশী আশ্রায়ণ কেন্দ্রে স্কুল প্রতিষ্ঠার জোর তৎপরতা চলছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই জেলেপাড়ার শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারব।'
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বিএসসি বলেন, 'অচিরেই শিশুশ্রম বন্ধে মেঘনা নদী এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হবে।'
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ জানান, স্কুলে না গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমন্বিতভাবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ ২৫ নভেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম-১৪