ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) মুনীর উল গিয়াসের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় তাকে শারীরিক নির্যাতন ও মিথ্যা চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামি করে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নির্যাতিত কলেজছাত্র মো. ইমরান হোসেন আদনান। এ অভিযোগে রবিবার সকালে ঝালকাঠি স্পেশাল জজ আদালতে এ নালিশী অভিযোগটি দায়ের করা হয়। এতে রাজাপুর থানার এসআই নজরুল ইসলাম, এএসআই সঞ্চিবন বালা ও ডা. মো. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেলকে আসামি করা হয়েছে। আদালত অভিযোগটি দুদকে দায়ের করা পরামর্শ দেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী খান শহিদুল ইসলাম।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলার রাজাপুর উপজেলার জগাইরহাট এলাকার প্রয়াত শাজাহান আলীর ছেলে স্থানীয় বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ইমরান হোসেন আদানান বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল। এ কাজের জন্য থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আনতে গেলে রাজাপুর থানা পুলিশ দশ হাজার টাকা দাবি করে। ৫ হাজার টাকা দিলে গত বছরের (২০১৬ সালের) ৫ ডিসেম্বর ঝালকাঠি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখা থেকে আদনানের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ নেই উল্লেখ করে প্রত্যায়ণপত্র দেয়া হয়।
এদিকে গত বছরের (২০১৬ সালের) ৭ ডিসেম্বর রাতে ১১টার দিকে রাজাপুরের বাসা থেকে দুই ভাই আদানান ও মুরাদকে থানায় ডেকে পাঠান ওসি মুনীর উল গীয়াস। আদালত চত্বরে এসে মো. ইমরান হোসেন আদনান অভিযোগ করে বলেন, এ সময় থানায় আটকে রেখে আমাকে বেধরক পেটায় পুলিশ। তখন ওসি আমাদের দুই ভাইকে বলেন, ‘শালা তোর বাবা ৪০ বছর বিদেশ ছিল তোদের অনেক টাকা। তাই ৫ লাখ টাকা দিলে ওর (আদনানের) জীবন ভিক্ষা দেয়া যাবে, অন্যথায় ক্রসফায়ারে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় ওসি মুনীর উল গীয়াস।'' এদিকে মামধরের এক পর্যায় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আদনানের ছোট ভাই মামলার ১নং সাক্ষী কামরুল হাসান মুরাদ বলেন, পুলিশের নিযাতন সহ্য করতে না পেরে বাসায় গিয়ে তার মাকে সাথে নিয়ে থানায় আসে ও ওসির হাতে দুই লাখ টাকা দেয়ার পর ভাইয়ের ওপর মারধর থামায়। অপরদিকে আটককালে আদনানের কাছ থেকে তার পূবালী ব্যাংক রাজাপুর শাখার (হিসাব নং ৭১৪০৪৫৫) অনুকূলে একটি চেকের পাতায় টাকার অংক ফাঁকা রেখে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় ওসি। পরদিন ৮ ডিসেম্বর একটি চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামি দেখিয়ে রাজাপুর থানা পুলিশ আদনানকে আদালতে সোপর্দ করে।
কামরুল হাসান মুরাদ আরও বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই উল্লেখ করে মাত্র দুদিন আগে পুলিশ প্রত্যায়ণপত্র দিল। কিন্তু ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় দুদিন পর তাকে চুরির মামরায় সন্দেহভাজন আসামি দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। নির্যাতিত কলেজছাত্র ইমরান হোসেন আদনান জানান, দু’এক দিনের মধ্যেই ওসি মুনীর উল গীয়াসের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও কলেজ ছাত্রকে থানায় আটকে নির্যাতন ও মিথ্যা চুরির মামলায় সন্দেহভাজন আসামী করার অভিযোগটি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে সারা দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। কলেজছাত্র আদনানকে থানায় আটকে নির্যাতনের অভিযোগে ওসিসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আগামীকাল আদালতে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব