সুস্থ মানুষের মতো বেঁচে থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবার স্বপ্ন নিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়ছেন শারিরিক প্রতিবন্ধী আলমগীর। ২৪ বছরের টগবগে এই তরুনের এখন চলার একমাত্র সঙ্গী হুইল চেয়ার।
স্বপ্ন থাকলেও স্বাধ্য নেই। নিজের সুস্থতার জন্য ওষুধের টাকা নেই। এরপরেও স্বপ্ন দেখছেন সুস্থ হওয়ার এবং নিজের বাবা-মার সংসারে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে একটু ভাল থাকার।
চলাফেরায় অক্ষম প্রতিবন্ধী আলমগীর দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মরিচা ইউপির মরিচা গ্রামের সামসুল হকের ছেলে।
আলমগীর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। নিজে কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে চলাফেরাসহ আর কিছুই করতে পারে না সে।
আলমগীর সবার সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে মরিচা ইউপির গেইটের সামনে একটি অস্থায়ী ছোট্ট দোকান করে। তবে দোকানের ভিতর সে বসতে পারে না কিংবা উঠতেও পারে না। সে ওই দোকানের পাশে হুইল চেয়ারে বসে শুধু পন্যের দাম নেয়। আর ক্রেতারা নিজেরাই পন্য নিয়ে তাকে দাম দিয়ে যায়। বাড়ীর লোকজন এসে দোকান বন্ধ করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এভাবেই চলে তার দোকানদারী।
আলমগীর হোসেনের প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচ লাগে ২ হাজার ৬শ' টাকার অধিক। এত চিকিৎসার খরচ দিতে পারে না দরিদ্র বাবা-মা। তাই এ দোকানের আয় দিয়ে তার চিকিৎসা খরচ সহ তার বাড়ীর সংসারে সাহায্য করাই তার লক্ষ্য।
আলমগীর হোসেন জানায়, তিনিসহ বাবা-মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং ২ মেয়েসহ ৭জনের সংসার। বাবা ও ভাই মাঠে দিন হাজিরায় কাজ করেন। সেও কাজ করে তাদের সাহায্য করতেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে শরীরের নিন্মাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে প্যারালাইসিস হয়ে গেলে একেবারে অচল হয়ে পড়ে সে। ২০১০ সালে হাসপাতালে ২ মাস ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছিল। এরপর তার চিকিৎসা করা হলেও আর ভাল হয়নি। তবে চিকিৎসা অনুযায়ী ওষুধ খেলে ব্যাথাসহ বিভিন্ন শারিরক সমস্যা হয় কম। কিন্তু চিকিৎসার এত টাকা পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। বীরগঞ্জ শহরের একজন সোহেল আহমদ সহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় এ দোকানটি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ রেজাউল আলম এর অধীন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি জানান, এ দোকানের লাভের টাকা দিয়ে আমার চিকিৎসার খরচটা হয় এবং বাড়তি থাকলে সংসারে দেয়া হয়। এ অবস্থায় একটু সুস্থ থেকে কারো যেন বোঝা হয়ে থাকতে না হয় এটাই সব সময় মনে করি।
বিডি প্রতিদিন/১২ এপ্রিল, ২০১৭/হিমেল