হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মার চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মাঠে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলের ৪ টি ইউনিয়নের ২ সহস্রাধিক বিঘার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে। বিস্ময়ের বিষয় গত কয়েকদিনে ফসলের এ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনো এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানে না স্থানীয় কৃষি দপ্তর। ফলে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহতা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ না জানায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়,গত ৩-৪ দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার পদ্মার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়। এতে চরাঞ্চলের চরজানাজাত, কাঠালবাড়ি, বন্দরখোলা ও মাদবরচর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী মাঠের বোরো ক্ষেত তলিয়ে যায়। এখনো ৪টি ইউনিয়নের প্রায় দুই-আড়াই হাজার বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তলিয়ে যাওয়া মাঠের অধিকাংশ ধানই আধা পাকা। এদিকে ফসল হারিয়ে চরের কয়েক হাজার কৃষকের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। কারণ চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা এ ধান থেকেই আসে। অধিকাংশ কৃষকই এনজিও, ব্যাংক অথবা চরা সুদে মহাজনী ঋণে টাকা এনে বোরো ধানের আবাদ করেছিল। অনেকে তলিয়ে যাওয়া ধান তোলার চেষ্টা করলেও ধান পরিপক্ক না হওয়ায় হতাশ তারা। একদিকে ধান অপরদিকে খড়কুটা হারানোয় সামনে গবাদী পশুর খাদ্য সংকটও দেখা দেয়ার শংকা রয়েছে। ফসলের এ ব্যাপক হানি হলেও এ বিষয়টি এখনো কৃষি দপ্তরের কেউই না জানায় বা পরিদর্শন না করায় ক্ষতিগ্রস্থরা চরম ক্ষুদ্ধ। ফসল হানির ব্যাপকতা তুলে ধরে দ্রুত সহায়তা ও চলমান এনজিও ব্যাংকের ঋণ মওকুফের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
বেপারীকান্দি গ্রামের কৃষক শাহিন বলেন, আমার ২২ বিঘা ধান ঢলের পানিতে তলাইয়া গেছে। পাকার আগেই কাইটা ফালাইতাছি। যা ধান পাবো তাতে খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোনও লোক খবরও নেয় নাই।
আরেক কৃষক মজিবর শেখ বলেন, আমি এনজিও থিকা ঋন আইনা ধান লাগাইছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থিকা ঋন কইরা ধান লাগাইছে। এহন ঋনের টাকা শোধ করমু কেমনে। সরকার যদি আমাগো দিকে না তাকায় তয় মইরা যামু।
কাঠঁলবাড়ি গ্রামের কৃষক রুস্তম মিয়া বলেন, ধান কেবল মাত্র পাকা শুরু করছে। এমন সময় হঠাৎ ঢলের পানি আইসা সব ধান নষ্ট কইরা দিছে। এমন ভাবে ধান গাছ পইচা গেছে যে গরুরে খাওয়ানের খেরও থাকবো না । আমরা সরকারের সাহায্য চাই।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম সালাহউদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে ঢলের পানি এসে এ উপজেলার চরাঞ্চলের পদ্মা নদী তীরবর্তী বোরো ধানের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকের ক্ষতি নিরুপন করার চেষ্টা করছি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার