পরকীয়ার অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় গ্রাম্য মাতব্বরদের বর্বরোচিত রায়ে এক মান্দি (মান্দাই) সম্প্রদায়ের দম্পত্তিকে মাথা ন্যাড়া ও গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেই করা হয়েছে মারপিট। এছাড়াও নির্দেশ দেয়া হয়েছে এলাকা ছাড়ার এবং ৫০ হাজার টাকার জরিমানার। টাকা শোধ না করা পর্যন্ত ঘরের বাইরেও বের হওয়া মানা।
গত বুধবার রাতে কোচ সম্প্রদায়ের সালিশি বৈঠক উপজেলার ৮নং রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের মিত্র মোহন বর্মণের বাড়িতে এমন রায় দেন মাতব্বররা। এসময় ওই সম্প্রদায়ের প্রায় দেড় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা হচ্ছেন- কয়েস চন্দ্র বর্মণ (৩৫) ও লক্ষ্মী রানি বর্মণ (৩০)। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের মাছে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই দু:খজনক। আমি ইউএনও এবং ওসির সাথে কথা বলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। এবং আমার ব্যাক্তিগত খাত থেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেছি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার সেকান্দর আলী বলেন, শুক্রবার আমি বিষয়টি শুনেছি, বিষয়টা অমানবিক।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বছখানেক আগে বাক্কুর চালা গ্রামে ইবির আলীর সাথে বন্ধুতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কয়েস চন্দ্র বর্মণ এবং তার পরিবারের। সেই সুবাদে প্রায়ই একে অন্যের বাড়িতে আসা যাওয়া করে দুই পরিবার। গেল বুধবার দুপুরে লক্ষী রানি বর্মণ ইবির আলীর বাড়িতে গেলে ক্ষেপে ওঠে কোচ সম্প্রদায়ের মাতব্বররা। ওই রাতেই চন্দন বর্মণ, রূপচান, নরেন, পাইলট, পরেশ, কালি মহন বর্মণসহ অরো চারজন মাতব্বর মিত্র মোহন বর্মণের বাড়িতে সালিশ ডাকেন। সালিশে লক্ষ্মী রানির বিরুদ্ধে ইবির আলীর সাথে অবৈধ পরকীয়ার অভিযোগ তোলা হয়। যদিও দীর্ঘ সালিশ শেষে পরকীয়ার কোন প্রমাণ না পেলেও দেয়া হয় এমন অমানবিক রায়।
মুঠোফনে লক্ষী রানি বর্মণের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইবির আলীর সাথে কোন ধরনের অবৈধ সম্পর্কে ছিল না লক্ষী রানির। শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে। অন্য ধর্মের একজনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ওঠার কারনেই সমাজপতিদের সালিশি নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আরও জানা যায়, ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি না থাকায় অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যেতে পারছে না তিনি।
সালিশের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজপতি নবীন চন্দ্র বর্মন বলেন, অভিযোগের সত্যতা থাকায় আমরা আমাদের ধর্ম মতে বিচার করেছি।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি রিফাত খান রাজীব জানান, এ ঘটনায় বাদী হয়ে লক্ষী রানি বর্মন রবিবার বিকেলে একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ এপ্রিল, ২১০৭/মাহবুব