ধান ও মাছের জেলা হিসেবে বেশ পরিচিতি ছিল নেত্রকোনা। মাছেভাতে বাঙ্গালির এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব ডুবে গেল। হাওরে হাজার হাজার হেক্টর ধান ডুবে যাওয়ার পর এবার মাছেও দেখা দেয় পচন। খাবারে বড় ধরনের সংকটের অশংকায় জেলাবাসী। গত ১ এপ্রিল নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের চরহাইজদা বেড়িবাঁধ ভেঙে সবচেয়ে বড় ডিঙ্গাপোতা হাওরে প্রথম পানি প্রবেশ করে। পরবর্তীতে এক এক করে প্রায় ১৯টি ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙতে থাকে। এতে করে জেলার পাঙ্গাসিয়া হাওর, রানিচাপুর হাওর, চৌতারার হাওর, তলার হাওর, ছায়ার হাওর, জালিয়ার হাওর, গণেশের হাওর, নামার হাওর, সুনই হাওর ও জগন্নাথপুর ঘোনা, পাগলা বিল, তেতুলিায়া প্লাবন ভুমি, জুক্কার বিল, চেঙ্গা বিল, গজারিয়া বিল, বৈঠাখালি বিল, বদরখানি টুনাই জলমহাল, চেঙ্গা বিল, ধলিমাটি বিল, রোয়াইল বিল, মৈদা বিল-সহ ছোট-বড় ৪২টি হাওর এবং বিল পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৭ শত ১০ হেক্টর জমির কাচা পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে কৃষকদের অভিযোগর ভিত্তিতে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরের মত। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০০ কেটি টাকার মত। এদিকে গত ১৭ তারিখ থেকে হঠাৎ করে ডিঙ্গাপোতা হাওর-সহ বিভিন্ন হাওরের মাছে মড়ক দেখা দেয়। মাছসহ জলজ প্রাণিগুলো মরে ভেসে উঠতে থাকে। সেই সাথে পানির মধ্যে দেখা দেয় দুর্গন্ধের। এতে হাওরাঞ্চলের মানুষের মাছে দেখা দেয় আতংকের। কেই কেই মাছ কুড়িয়ে নিজেরা খায় এবং বাজারে বিক্রির চেষ্টা করে। এদিকে গত ২১ তারিখ থেকে পানিতে অক্সিজেনের অভাবে মাছ মরে যাচ্ছে বলে মৎস্য দপ্তরের নির্দেশে হাওরে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাওরে মাছের মড়ক রোধ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভা করেছে জেলা মৎস্য দপ্তর। গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজুরবাজার জেলা মৎস্য দপ্তরের হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য তুলে ধরেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা হোসাইন ও মোহনগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ সাহা। সভায় জানানো হয়, জেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর ও ছোট-বড় ৪২ টি বিলে কার্ডধারী জেলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৬ হাজার ৫২৮ জন। নষ্ট হয়ে যাওয়া মাছের পরিমাণ ১১৮০.৮৫ মেট্রিক টন। মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন ও বারহাট্টা মোট এই চারটি উপজেলার সরকারী হিসেব মতে আনুমানিক প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও সভায় আরো জানানো হয়।
জেলা মৎস্য দপ্তর ইতিমধ্যে হাওর এলাকায় ৭দিন মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। সেই সাথে চুন ও অক্সি-ফ্লো/অক্সি-এ/অক্সিমেক্স জলাশয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার