রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নাঈম আশরাফ সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে প্রতারক হালিম নামে পরিচিত। সাধারণ ফেরিওয়ালার ঘরে জন্ম নেয়া হাসান মোহাম্মদ হালিম ঢাকায় গিয়ে নাম বদলে হয়েছে নাঈম আশরাফ। প্রকৃতপক্ষে হালিম একজন প্রতারক। ধর্ষণের ঘটনার পর মিডিয়াতে ছবি দেখে কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের বাসিন্দারা তার পরিচয় নিশ্চিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, গান্ধাইল গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয় হালিম। বাবা আমজাদ হোসেন একজন দিনমজুর। মাঝে মাঝে ফেরি করে থালা-বাটিও বিক্রি করতেন। আবার কৃষি কাজও করেছেন। স্কুলজীবন থেকেই হালিম প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে গান্দাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে হালিম।
স্কুলে ছাত্র থাকা অবস্থায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পরিচয় ব্যবহার করে রাজশাহী বোর্ড থেকে প্রশ্ন এনে ফেঁসে গিয়েছিল হালিম। এসএসসির পর ভর্তি হয় বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। সেখানে পড়াশুনা করা অবস্থায় সিরাজগঞ্জ শহরের এক প্রভাবশালী ঠিকাদারকে নিজের বাবা পরিচয় দিয়ে বিত্তশালী পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করে হালিম। পরিচয় জানার পর মেয়ে পক্ষ হালিমকে মারপিট করে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেয়। আর বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়।
এরপর রাজধানীর তেজগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে ডিপ্লেমা পাস করার পর হালিম এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে যায় ইন্টার্নি করতে। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে তার চাকরি হয়। কিন্তু চেক জালিযাতির কারণে তার চাকরি চলে যায়। পরে আরেক বেসরকারি টিভিতে একই পদে চাকরি নেয়। সেখানেও একই কারণে চাকরিচ্যুত হয়। হালিম বর্তমানে গান এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগে কর্মরত।
ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করে রাজধানীর কালসি এলাকার সাংবাদিক কলোনির পশ্চিম অংশের এক্সটেনশন রূপপুরের ৪নং গলিতে ৫ তলা ভবনের তৃতীয় তলার পিছনের অংশের একটি ফ্ল্যাটে। স্থানীয়রা আরো জানান, প্রতারক হালিম জীবনে বহু মানুষকে নিজের বাবা বানিয়ে অকাম-কু-কাম করেছে।
কাজিপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম জানান, হালিম কখনো দলের মিছিল-মিটিং করেনি। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদ ব্যবহার করে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর পর যুবলীগের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই ব্যানার-ফেস্টুনগুলো এখনো অপসারণ করা হয়নি।
কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন বলেন, ছোট থেকেই হালিম প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। বাবা-মা ও নিজের নাম বদল করে এর আগেও সে বেশ কয়েকটি অপকর্ম করেছিল। যার দেন দরবার আমরাও করেছি।
প্রতিবেশী নূরজাহান জানান, ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর টিভিতে যখন নাঈম আশরাফ নাম বললো, তখন আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। যখন ছবি দেখালো তখনই বুঝলাম এ তো আমাদের হালিম। ঘটনার পর থেকে হালিমের বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
চাচি মাহমুদা খাতুন বলেন, বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে হালিম দীর্ঘ ৫ বছর বাড়িতে আসে না। কিছুদিন হলো সে তার বাবা-মাকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। বাড়ির সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
স্থানীয় গান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, হালিম নাম পরিচয় গোপন করে ছাত্র অবস্থায় বগুড়ায় ও এক বছর আগেও ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল, যে দরবার আমি নিজে করেছি। সে বছরে ২/১ বার এলাকায় আসে। প্রতারণাই তার পেশা। স্কুলজীবন থেকেই সে প্রতারক। আমার কাছেও তার বিরুদ্ধে লোকজন অভিযোগ করেছে। কিন্তু এলাকায় না থাকায় তার বিচার করতে পারছি না। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকলে আমরা তার শাস্তি দাবি করছি।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, অভিযুক্ত হালিমকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি প্রডতিদিন/ ১১ মে ২০১৭/আরাফাত