সিরাজগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কগুলোতে ইট-খোয়া-পাথর-বিটুমিন ওঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলসহ লক্ষ লক্ষ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবিলম্বে রাস্তাগুলো মেরামত জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিটুমিনসহ পাথরগুলো ওঠে গেছে। রাস্তার মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ রাস্তায় দিয়ে ভারীযাহন চলাচল করে। গর্ত থেকে চাকা বাঁচাতে দ্রুতগতির যানবাহনগুলো সাইড করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছ। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় মহাসড়কের নলকার ব্রীজের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ঝুকির মধ্যে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন পাথর ওঠে গেছে। এছাড়াও আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর-কড্ডার মোড়, সিরাজগঞ্জ সদর-নলকা, উল্লাপাড়া-মোহনপুর-উধুনিয়া, ভুইয়াগাতী- নিমগাছি-তাড়াশ আঞ্চলিক সড়কগুলোর করুণদশা।
সিরাজগঞ্জ সদর-কড্ডার মোড় রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ রাস্তা দিয়েই ঢাকাসহ বেলকুচি-কামারখন্দ উপজেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্ত হওয়ায় চালকসহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে। সিরাজগঞ্জ সদর-নলকা আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বগুড়াসহ প্রায় পাঁচ উপজেলার যানবাহন চলাচল করে। এরাস্তাতে বিটুমিন ওঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
মোহনপুর, উধুনিয়া, বড়পাঙ্গাসীসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি দীর্ঘ আট বছর যাবত বেহাল দশা। হাটিকুমরুল বনপাড়া-মহাসড়কের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর থেকে তাড়াশ উপজেলা সদর ও রানীর হাট যাবার একমাত্র রাস্তা মান্নাননগর-রানীরহাট। এ রাস্তা দিয়ে শতাধিক গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার অধিকাংশ স্থানে ছোট-বড় গর্ত ও ইট খোয়া ওঠে যাওয়ায় মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নিমগাছি-তাড়াশ রাস্তাটির আরো করুণ দশা। কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে এ সকল রাস্তায় খোয়া-আর বিটুমিন দিয়ে গর্ত ভরাট করে লক্ষ লক্ষ টাকা বিল ওঠিয়ে নিলেও কয়েকদিন পর একই অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি কমছে না।
লাহিড়ী মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা হাসান, আয়নাল-জহিরসহ অনেকে জানান, উল্লাপাড়া-মোহনপুর রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। এলাকায় কোন অ্যাম্বুলেন্স আসতে চায় না। যে কারণে ভ্যান করে কোন মুমূর্ষু রোগী নিয়ে উপজেলা সদর হাসপাতালে যেতে চাইলে রোগীর অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে।
তাড়াশ উপজেলার আব্দুল হাকিম, মনোয়ার হোসেন জানান, মান্নাননগর-রানীর হাটের রাস্তায় মাঝখানে যেন পুকুর সৃষ্টি হয়েছে। মাঝেই যানবাহন উল্টে যেন সেই পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়।
ভ্যান চালক আলী আসগর জানান, যাত্রীরা ভ্যানে উঠতে চায় না। ঝাকিতে কোমর ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হয়। মাঝে ভ্যান উল্টে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ভ্যান গাড়ী ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আমাদের এ দুঃখ কেউ দেখে না।
সিএনজি চালক রায়হান, আব্বাস আলী জানান, সিরাজগঞ্জ সদর-কড্ডা, সিরাজগঞ্জ-নলকা রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্ত হওয়ায় মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।
নিমগাছী এলাকার আলী আকবর, হযরত আলী জানান, ভুইয়াগাতী-নিমগাছি-তাড়াশ রাস্তায় শুকনোর সময় একটু চলাচল করা যায় আর একটু বৃষ্টি হলে একেবারে চলাচল করা যায় না।
তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু রাস্তায় মাঝে মাঝে কিছু পাথর ও বিটুমিন দিয়ে গর্ত ভরাট করে চলে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পরেই একই অবস্থায় হয়। রাস্তা সংস্কারের নামে শুধু সরকারের টাকা লোপাট হয় কাজের কাজ কিছুই হয় না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, অতি বর্ষণের কারণে রাস্তাগুলো খারাপ হয়ে গেছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হবে। তাছাড়া আঞ্চলিক সড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। এগুলো অনুমোদন হলে টেন্ডার মাধ্যমে সংস্কার করা হবে।