নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে ব্যাপক হারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পর রোগী পরিবারের মাঝে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই চিকুনগুনিয়া না হলেও সাধারণ জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত রোগীরাই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভীড় করছেন চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এ আতঙ্ক কাটাতে মাইকিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আজ থেকে উপজেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে মাইকিং করে এ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে । স্থানীয়দের দাবি চিকুনগুনিয়া নামক এ রোগে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিবারের একজনের আক্রান্তের পর অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে এ ভাইরাস জ্বর চিকুনগুনিয়া। এতে বাদ পড়েনি বৃদ্ধরাও।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার মধূখালী, কাঞ্চন, ব্রাহ্মণখালী, হাটাব, আতলাসপুর, ইছাখালী, কায়েতপাড়া, বেলদী, বরপা, মুশুরী, মর্তুজাবাদসহ বিভিন্ন গ্রামের জ্বরে আক্রান্ত রোগী রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বে-সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রয়েছেন। এসব রোগীর প্রথমে মাথা ব্যথা শুরু হয়। পরে জ্বর ও শরীরের বিভিন্ন অংশে র্যাশ পড়ে।গিরায় গিরায় ব্যথা অনুভূত হয়। এর পর থেকে রোগীর পরিবারের অন্য সদস্যরাও একইভাবে আক্রান্ত হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা চিকুনগুনিয়া বিষয়ে প্রচারনার কাজ হাতে নিয়েছেন। এ বিষয়ে আল রাফি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কলামিস্ট মীর আব্দুল আলীম বলেন, চিকুনগুনিয়া দেশব্যাপি মহামারিতে রূপ নিয়েছে। রূপগঞ্জেও এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে চিকুনগুনিয়া কিনা তা যাচাই না করেই অনেকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিধনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ি করেন তিনি। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্যের সাথে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার নেয়ামূল জানান, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত ২ থেকে ৭ দিনের মাথায় জ্বর হয়। এ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরের শীত শীত ভাব অনুভুত হয়। সাথে মাথা ব্যথা, শরীরের গিরা বা জয়েন্টে ব্যথা, খাওয়ার অরুচি, ক্লান্তি, শরীর দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানী ও র্যাশ, অস্থিরতা ও ঘুম না হওয়াসহ নানা জটিল সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়াসহ বমি ভাব হয়। তবে ডাক্তারের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এ জ্বর সনাক্ত করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার জাইদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির পাশের ঝোপ ঝাড় পরিচ্ছন রেখে ও বাড়ির নোংরা পরিবেশ দূর করতে মশন নিধনে ঘরোয়া ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্রাম ও প্যারাসিটামল গ্রহণের মাধ্যমেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ঋতু পরিবর্তন জনিত কারণে এ জ্বরের প্রকোপ বেড়ে থাকে। এর স্থায়ীত্বকাল সাধারণত ৩-৫ দিন। এর অতিরিক্ত সময় ব্যয় হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামুলক বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া (গত মাসে) প্রায় সাড়ে তিন শ' রোগীই চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক নিয়ে ভর্তি হয়। তবে তাদের মাঝে কেহই মূলত এ জ্বরে আক্রান্ত হয়নি। তবে আতঙ্কিত হচ্ছেন রোগীরা। তাই উপজেলার জনসাধারণকে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হতে মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার