মানসিকভাবে অসুস্থ এক যুবককে চিকিৎসার পরও সুস্থ না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে বাড়ির বাইরে গাছের সাথে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। আর খোলা আকাশের নীচে ঝড়-বৃষ্টি, প্রচন্ড শীত ও স্যাঁতস্যাঁতে কাদা-মাটিকে সঙ্গী করে কাটছে তার মানবেতর জীবন। এভাবেই এখন কেবল মৃত্যুই যেন তার একমাত্র গন্তব্য। এ ঘটনাটি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের বড় হরিপুর পূর্ব ম্যাড়েয়া গ্রামে।
জানা যায়, বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ে স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বিবস্ত্র অবস্থায় দু’চোখ বন্ধ করে মাটিতে পড়ে রয়েছে আজাদ আলী (৩৫)। তার এক পা কাঁঠাল গাছের গোড়ায় শিকলে বাঁধা। সেখানেই চলে তার আহার ও নিদ্রা। এমনকি সেখানেই করে প্রাকৃতিক কাজ। বাবা ও ভাইয়েরা তার কাছে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেয়। মলমূত্রের মাঝেই কাটছে তার অনিশ্চিত জীবন।
ওই গ্রামের ধনাঢ্য কৃষক আফতাব উদ্দিন প্রামানিক (৭৫) ও মা রওশন আরা (৬৭)’র ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ সন্তান আজাদ আলী। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠেন তিনি। ২০০৭ সালে তার বিয়েও হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরে মানুষিক অসুস্থতা প্রকটভাবে দেখা দেয় বলে তার বড় ভাই আব্বাস আলী জানায়।
অসুস্থ আজাদ আলীর বড় ভাই আব্বাস আলী বলেন, প্রায় এক যুগ থেকে সে অসুস্থ। তাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একাধিবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া রংপুরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল ইসলামের কাছেও দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু কোন সুফল না পাওয়ায় তার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। তার বড় ভাই দাবি করেন, নিজের ভাইকে কখনো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে চাইনি। কিন্তু ছাড়া পেলে সে মানুষের উপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে। কাপড় পরিয়ে দিলেও সে টেনে-হিছড়ে ছিড়ে ফেলে। সেজন্য বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। একবার মা তাকে খাওয়াতে গেলে সে মাকে এমন ভাবে আছাড় দেয়! তখন থেকে মা কথা বলতে পারেন না। তিনি এখন অনেকটা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তবে বৃষ্টি এলে মাথার উপর পলিথিন দেয়। সেটাও সে ছিড়ে ফেলে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার