দেশের সর্ব উত্তরের সম্ভাবনাময় স্থল বন্দর বাংলাবান্ধায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ আইনকে ভুলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে তারা হতাশ হয়ে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এই আইনের জটিলতায় পড়ে অনেক আমদানিকারক লোকশানের মুখেও পড়েছেন। তাদের অভিযোগ একই আইন মেনে অন্যান্য বন্দর দিয়ে উদ্ভিত জাত দ্রব্য আমদানি করা গেলেও এই বন্দরের সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছেনা। ফলে একদিকে যেমন আমদানিকারকরা লোকশান গুনছেন, অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশ আমদানি রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় উল্লেখ আছে আমদানিকৃত চাল, গম অন্যান্য খাদ্যশষ্য এবং খাদ্য দ্রব্যের মান ও গুণাগুণ মানুষের খাবার উপযোগী এবং সর্বপ্রকার ক্ষতিকারক জীবাণুমুক্ত মর্মে রপ্তানিকারক দেশের সরকারি বা অনুমোদিত সংস্থা কর্তৃক ফাইটো স্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও সংগনিরোধ কর্মকর্তার কাছে প্রদান করতে হবে।
কিন্তু বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের সংগনিরোধ কর্মকর্তারা এই নীতিমালা মানছেন না। তারা কেবলমাত্র রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ফাইটো স্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) হলে মালামাল আমদানির অনুমতি দেবেন বলে ব্যসায়ীদের জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোন সংস্থার প্রত্যয়নপত্র তারা গ্রহণ করেন না। অথচ একই নীতিমালায় অন্যান্য বন্দর দিয়ে পুরোদমে আমদানি কার্যক্রম চলছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে সময়ের দীর্ঘসূত্রিতা ও নানা কারণে রপ্তানীকারকরা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট দিতে পারেন না। তখন সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংস্থা থেকেই তাদের ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়।
তারা আরও জানান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বশেষ আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মেনেই তারা ভারত, নেপাল এবং ভূটান থেকে উদ্ভিত জাত দ্রব্য আমদানী করতে চান। এদের মধ্যে অনেকেই দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে একই আইনে আমদানিও করছেন। এদিকে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ ও পরিবহনে সময় কম লাগবে বলে অন্যান্য বন্দরের তুলনায় এই বন্দর দিয়ে উদ্ভিদ জাত দ্রব্যাদি আমদানি করতে আগ্রহী। অনেকে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য অন্যান্য বন্দরের পাশাপাশি এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে চান। কিন্তু এই বন্দরের সংগনিরোধ কর্মকর্তারা আইনের ফাঁক ফোঁকর দেখিয়ে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, বিসমিল্লাহ ডাল মিল্ক নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত মে মাসে এই বন্দর দিয়ে ৫ হাজার টন প্রক্রিয়াজাত ভূট্টা আমদানির জন্য ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ডলারের এলসি খোলেন। কিন্তু ভারতীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি সংস্থা থেকে সংগৃহীত ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট বন্দরের সংগনিরোধ কর্মকর্তারা গ্রহণ করেননি। একই কগজ প্রত্র দিয়ে ঐ ভূট্টা পরবর্তিতে ভোমরাদহ বন্দর দিয়ে আনা হয়।
একইভাবে সেতু ইন্টারন্যাশনাল, প্রহর ইন্টারন্যাশনাল, আঁখি অ্যান্ড অপু ইন্টারন্যশনালসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করতে না পেরে লোকশান করেছেন। গাজীপুরের এজি এ্যাগ্রো ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য এই বন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত ভুট্টা আমদানি করার জন্য এক কোটি ডলারের এলসি খুলেছিলেন। কিন্তু এই জটিলতার কারণে তারা ভুট্টা আনছেন সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানের সিএন্ডএফ এজেন্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, একই আইনে অন্যান্য বন্দর দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের একই মালামাল আমদানি করা যাচ্ছে। কিন্তু এই বন্দরের সংগনিরোধ কর্মকর্তারা অনুমোতি দিচ্ছেন না। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি ব্যবসায়ী থেকে শ্রমিক এই বন্দরের সবাই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। বড় বড় আমদানিকারকরা এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের সহকারি কমিশনার ফরিদ আল মামুন জানান, আমদানি নীতিমালা ২০১১ তে বলা আছে সরকার বা সরকার অনুমোদিত সংস্থা থেকে নেয়া ফাইটো সেনেটারি সার্টিফিকেট গ্রহণ করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহাদৎ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উদ্ভিদ জাত কোন দ্রব্য বা কোনকিছু আমদানি করতে হলে সংগনিরোধ আইনে রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট লাগবে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংস্থার ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট দিয়ে আগে আমদানি করা যেতো। এখন আর কোন বন্দর দিয়ে হয়না।
বিডি প্রতিদিন/২৬ আগস্ট ২০১৭/হিমেল