বেসরকারী হাসপাতাল আর ক্লিনিক হওয়ায় নরমাল ডেলিভারী প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ব্যবসায়ীক কারণে এসব ক্লিনিকে সিজার করানোর জন্যে আছে দালাল চক্র। আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু অদক্ষ, প্রশিক্ষণবিহীন দায় মা'ও আছে। এই দায় মার কারণে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। দালাল চক্র এবং অদক্ষ দায়মা’র হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতেই বীরগঞ্জ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক একটি টিম ওয়ার্ক শুরু করেন।
'নরমাল ডেলিভারিকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন' এই শ্লোগান নিয়ে বীরগঞ্জ হাসপাতালের দৃশ্যপট বদলিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক। আর এই শ্লোগান এখন গ্রামে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে বীরগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য তারা প্রচারণায় বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। সেখানে প্রসূতি মহিলাদের দেখে বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারী না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সিলিং আর চেক আপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারী করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বার, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, সরকারী ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও’র স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয়। এ ছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়েও কাউন্সিলিং করেন।
হাসপাতালের এ টিম ওয়ার্কে রয়েছেন, বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহমুদুল হাসান পলাশ, মেডিকেল অফিসার ডাঃ আফরোজ সুলতানা, ডাঃ তাহমিনা ফেরদৌস, ডাঃ মাধবী দাস।
বীরগঞ্জের দামাইক্ষেত্র গ্রামের মোঃ আজিজার রহমানের স্ত্রী মোছাঃ জেসমিন আকতার (৩৩)। তার ৩ সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান ১৩ বছরের একটি মেয়ে। দ্বিতীয় সন্তান ৯ বছরের। তৃতীয় সন্তান ৬ বছরের ছেলে। শুক্রবার হাসাপাতালের স্বাভাবিকভাবে আরো একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে তিনি।
হাসপাতারের বেডে অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে মোছাঃ জেসমিন আকতার জানান, বয়সের কারণে এবং দেরি করে সন্তান নেওয়ার কারণে এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের মাঠ কর্মী এবং হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্ভয় প্রদান করে দায়িত্ব নিলে হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে স্বাভাবিকভাবে (নরমাল ডেলিভারী) একটি ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে। আমি এবং আমার ছেলে এখন সুস্থ আছি।
একই কথা বললেন বীরগঞ্জের চাকাই গ্রামের মোঃ এরশাদুলের স্ত্রী মোছাঃ আনজু আরা (২২), শীতলাই গ্রামের মোঃ সুমন ইসলামের স্ত্রী রোকসানা বেগম (২৫)। শুক্রবার হাসপাতালে এই ৩ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়।
এ ব্যাপারে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহমুদুল হাসান পলাশ জানান, এক সময় বীরগঞ্জ হাসপাতালে প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করানো প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে আমরা সবাই মিলে টিম ওয়ার্ক শুরু করি। দালাল চক্রের কিংবা দায়মা-দের বাধা উপেক্ষা করে এর সফলতা পেয়েছি। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে যেখানে হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারী ৫/৬ জন করতো সেখানে দিনকে দিন এটা বৃদ্ধি পেয়ে গত আগস্ট মাসে ৩৫ জনকে নরমাল ডেলিভারী করানো হয়। আর এ সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫টি সফল নরমাল ডেলিভারী করানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দিন দিন এই নরমাল ডেলিভারি হাসপাতালে এসে করানোর সংখ্যা বাড়ছেই। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না।ডেলিভারি হওয়ার পর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড় এবং মশারী ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি জানান, এভাবে নরমাল ডেলিভারি হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও নিরাপদ হবে। দরিদ্রসহ সাধারন মানুষ অনেক খরচ থেকেও বাচঁবেন। এ হাসপাতালে ডেলিভারী নিরাপদ করতে ৫ জন দক্ষ মিডওয়েফ রয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল