প্রায় সম্পন্ন প্রতিমা তৈরি কাজ। তাই রঙ তুলির আঁচড়ের অপেক্ষায় রাঙামাটির দেবী মহামায়া। এবারে রাঙামাটিতে সবচেয়ে শৈল্পিক ও পাহাড়ের ঐতিহ্য নিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছে শহরের বিভিন্ন মন্দিরে। এবার দুর্গোৎসবে পাহাড়ের বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী যারা সনাতন ধর্মলম্বী তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ফুঠে উঠবে। তাই মণ্ডপ ও প্রতিমাগুলোকে তেমনিভাবে সাজানো হয়েছে। এবার ধাপে ধাপে দেবী দুর্গাকে তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলবেন মৃৎ শিল্পীরা। প্রতিটি প্রতিমা শরীর থেকে মুকুট পর্যন্ত হাতের শৈল্পিক কারু কাজ। কেবল রঙ আর তুলির আঁচড়ে চলছে সাজ-সজ্জার কাজ। রাঙামাটির বিভিন্ন মন্দিরে ও পাড়ায় পাড়য় দুর্গোৎসবে মেতেছে সবাই। প্রায় শেষ পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎ শিল্পীরা।
রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা জানান, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এবার দুর্গোৎসবে প্রতিমাগুলোকে বৈচিত্র্যময় সাজে পরিবেশ করা হবে। যাতে পাহাড়ি অঞ্চলে সনাতন ধর্মলম্বীদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ফুঠে উঠতে পারে। তাই এবার দুর্গোৎসব আকর্ষণীয় ও জমজমাট হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার রাঙামাটি শহরসহ জেলার মোট ৪০ পূজামণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি এখন শেষ। এবার রাঙামাটি সদরে ১৪, কাপ্তাইয়ে ৭, রাজস্থলীতে ৩, কাউখালীতে ৪, নানিয়ারচরে ২, জুরাছড়িতে ১, বিলাইছড়িতে ১, বাঘাইছড়িতে ৪, লংগদুতে ২ এবং বরকলে ২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভক্তকুলের বিশ্বাস, মঙ্গলবার মহালয়ায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবী অর্চনার ডামাডোল। ভক্তরা জানান, এবার মর্ত্যে দেবী দুর্গার আগমন হয়েছে নৌকায়।
রাঙামাটি পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য মতে, এবার পূজা উপলক্ষে শহরসহ জেলায় ৪০ পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে প্রতিটি মণ্ডপে বিস্তারিত কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। সার্বজনীন উৎসবের অংশে ২৬ সেপ্টম্বর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এরপর ২৭ সেপ্টম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টম্বর মহাঅষ্টমী, কুমারী ও সন্ধিপূজা, ২৯ সেপ্টম্বর মহানবমী ও ৩০ সেপ্টম্বর মহাদশমী। ওইদিন বিজয়া শোভাযাত্রা ও কাপ্তাই লেকে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সার্বজনীন কর্মসূচির অংশে শেষ হবে বর্ণিল শারদীয় দুর্গোৎসব।
এদিকে শহরসহ জেলার প্রতিটি মন্ডপে পূজা শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
রাঙামাটি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অমর কুমার দে জানান, শহরসহ রাঙামাটি জেলার প্রতিটি মণ্ডপে পূজার আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপগুলো সাজানো হচ্ছে নিজস্ব ঢং ও রঙে। প্রতিমা নির্মাণ শেষ। এখন কারিগররা ব্যস্ত প্রতিমার প্রাণ দিতে। এছাড়া সাজসজ্জাকরণ, আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল নির্মাণ চলছে। আমরা সব মণ্ডপে শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনে সব ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এছাড়া দুর্গোৎসব সুষ্ঠু ও সাড়ম্বরপূর্ণভাবে আয়োজন করতে প্রত্যেক পূজামণ্ডপে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি-প্রতিদিন/২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/মাহবুব