ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান। এতে বাড়তি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। এই অবস্থায় রুট ছোট করার লক্ষ্যে চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলের সংবেদনশীল সামরিক আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি আদায় করতে ভারত সরকারকে চাপ দিচ্ছে এয়ারলাইনটি।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়া তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন ও ইমেজ উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। কারণ গত জুনে গুজরাটে লন্ডনগামী একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হয়ে ২৬০ জন নিহত হয়। দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে গিয়ে কিছু ফ্লাইট সাময়িকভাবে বাতিল করতেও হয়। কিন্তু তাতে জটিলতা বেড়ে যায় পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।
গত এপ্রিলের শেষ দিকে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার পর পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দেয়।
অক্টোবরে ভারতীয় কর্মকর্তাদের দেওয়া নথিতে দেখা গেছে, পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ থাকায় এয়ার ইন্ডিয়ার জ্বালানি ব্যয় কিছু রুটে ২৯ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে গেছে এবং যাত্রাসময় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ভারত সরকার চীনকে অনুরোধ জানাক, যাতে এয়ার ইন্ডিয়া শিনজিয়াংয়ের হোটান, কাশগর ও উরুমচি দিয়ে বিকল্প রুট এবং জরুরি বিচ্যুতির ক্ষেত্রে বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেতে পারে।
নথিতে আরও বলা হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার লং-হল নেটওয়ার্ক কঠিন অপারেশনাল ও আর্থিক চাপে রয়েছে। হোটান রুট নিশ্চিত করা একটি কৌশলগত বিকল্প হবে। টাটা গ্রুপ ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া অনুমান করেছে যে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে বার্ষিক কর-পূর্ব লাভে ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের মোট ক্ষতি ছিল ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না এবং প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত, চীন ও পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ- কেউই সংবাদমাধ্যমের যোগাযোগে সাড়া দেয়নি। এয়ার ইন্ডিয়া চীনের যে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি চাইছে, সেই অঞ্চলটি ২০,০০০ ফুট (৬,১০০ মিটার) উঁচু পর্বতমালায় ঘেরা। ডিকমপ্রেশন ঘটলে জরুরি অবতরণের সুযোগ কম থাকায় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলো সাধারণত এ পথ এড়িয়ে চলে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই আকাশসীমা চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির পশ্চিমাঞ্চলীয় থিয়েটার কম্যান্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখানে রয়েছে ব্যাপক মিসাইল, ড্রোন ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এখানকার কিছু বিমানবন্দর বেসামরিক ও সামরিক উভয় ব্যবহারের জন্য যৌথভাবে পরিচালিত হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (পেন্টাগন)-এর ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কমান্ডের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ভারত-চীন সংঘাত হলে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। এছাড়া উন্মুক্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন জানান, সম্প্রতি চীন হোটান বিমানঘাঁটি আরও সম্প্রসারণ করেছে। সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ