আঁকাবাঁকা সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সোনালী ধানের হাসি। সে হাসিতে যেন হাসছে পাহাড়। কারণ পার্বত্যাঞ্চলে এবছরও জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই জুমিয়া নারী-পুরুষের চোখে মুখে এখন আনন্দের উৎচ্ছাস। পাহাড়ের জুম ক্ষেতে সবেমাত্র শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা উৎসব। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা উৎফুল্ল মনে ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে। জুমিয়াদের ঘরে উঠছে জুমের সেই সোনালি ফসল। একই সাথে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কজেও।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ অর্থাৎ পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ। জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই আদি জুম চাষ করে থাকে। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি মানুষগুলোর জীবিকার আদিম ও প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের শুধুমাত্র তিন পার্বত্য জেলায় এ জুম চাষ করা হয়। পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি বছর কত একর জায়গায় জুম চাষ হয়- তাঁর সঠিক পরিসংখ্যান তথ্য আজও জানতে পারেনি কৃষি বিভাগ । তবে পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেক জুমের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেলেও এবছর রাঙামাটিতে জুম চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে।
রাঙামাটি কৃষিভাগ সূত্রে মতে, জুমিয়ারা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষে উপযোগী করে তুলে। এপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তুলার কাজ । সে সময় মারফা, কাঁচা মরিচ, চিনার, ভূট্টো পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব।
জুমচাষী বিমলা চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর হঠাৎ পাহাড় ধসের কারণে অনেক ফসলি জমি বিলিন হয়ে গেছে। তবে যেসব জমি অক্ষত ছিল, সেগুলোতে ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি এবছর খাদ্য সংকট হবে না জুম চাষীদের।
রাঙামাটির জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপাপ্ত উপ-সহকারী কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক জানান, পাহাড়ে জুম কাটার ধুম পরেছে। ইতিমধ্যে ৫৮ভাগ জুম কাটা হয়েছে। যার পরিমাণ ২হাজান ৬২০ হেক্টর। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্র হচ্ছে ১.৩ মেট্টিকটন। রাঙামাটি প্রায় ১২টা জাতের জুমে ধান চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে মেরুন, গেলং, রাঙ্গি, কবরক, কামারং, বিনি, আমিং, তুরকি, ছড়ই, সুরি, মধুমালতি ও সোনাই চিকন উল্লেখযোগ্য। মাঠ পর্যায়ে আমরা প্রর্যাবেক্ষণ করে দেখেছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও জুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি এবছর কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার