মাদারীপুরের কালকিনিতে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা পৌরসভার পক্ষ থেকে ইজারার আওতায় আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনতা ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে বিগত বছরগুলোতে ইজারার নামে জোরপূর্বক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছিল। এবারও চাঁদা নেওয়ার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সর্ববৃহৎ গৃহস্থালী পণ্যের সমাহার নিয়ে এই মেলায় খুবই কম দামে খাট-পালং, সোফা, চেয়ার-টেবিল ও সুকেচ-আলমারিসহ বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যেত। তবে ইজারা ও চাঁদার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পর এখানে দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ক্রেতাদের আগ্রহও কমছে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা সংলগ্ন 'কুন্ডুবাড়ি' নামে স্থানীয় বনেদি পরিবারের পক্ষ থেকে শ্যামা কালীপূজা উপলক্ষে প্রায় দেড়শ বছর আগে এই মেলার দীননাথ কুন্ড ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। বর্তমানে সাত দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলাকে কুন্ডুবাড়ির কালীমন্দির ও বাড়ির চারপাশ এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। এজন্য বছরের পর বছর কোন অর্থ বা চাঁদা প্রদান করতে হতো না। ব্যবসায়ীরা নিজেরা সেখানে অবস্থান নিয়ে নিজেরাই স্টল তৈরি করে নেন।
কয়েক বছর পূর্ব থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবারের নেতৃত্বে কিছু বখাটে গোপনে চাঁদা আদায় শুরু করে। এরপর পৌরসভার পক্ষ থেকে কৌশলে ইজারার নামে টাকা আদায়ের অনুমতি মিলে তাদের। এরপর থেকেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স্টল তৈরি, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থার নামে এখানে কোন ধরনের কোনরূপ সেবা না দিয়ে তথাকথিত ইজারা নিয়ে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি শুরু করায় এখানকার কালীপূজার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কুন্ডুবাড়ি ও আশ-পাশের লোকজন জানায়, এখানে মেলায় যারা মালামাল নিয়ে আসতেন দোকান দিতেন তাদের কাছ থেকে কোনদিন কুন্ডুবাড়ির কেউ টাকা-পয়সা নেয়নি। শুধুমাত্র কুন্ডুবাড়ির কালীমন্দিরে যেসব ভক্তরা পূজা দিতে আসতেন তারা মন্দিরে যার যা ইচ্ছা দিতেন। বিশেষ করে মানতের টাকা বা অন্য যে কোন সামগ্রী। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফার্নিচার তথা গৃহস্থালী পণ্য নিয়ে আসে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আগে এখানে কোন টাকা-পয়সা দিতে হতো না। কয়েক বছরে ধরে বিভিন্ন খাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে মারধরও করে থাকে। এখানে জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, বরিশাল, মাগুরা, নড়াইলসহ দেশের প্রায় বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। তাই সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে। তবে আগের অনেক ব্যবসায়ী যারা অনেক মালামাল বিশেষ করে ফার্নিচার নিয়ে আসতো তাদের কেউ কেউ আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
মেলার ইজারা ও স্টল বরাদ্দের ব্যাপারে জানতে চাইলে কালকিনি পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন বলেন, হাট-বাজার ইজারার সাথে এই মেলার ইজারা দেয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়। স্টল তৈরি, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ইজারাদারের। তবে ইজারাদার কাজী কাজল দাবি করেন, তিনি পৌরসভার কাছ থেকে এক লাখ ৭ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন।
চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র আরও বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তবে কোন স্টল থেকে কত টাকা বা কি হারে টাকা আদায় করা হবে এ বিষয়ে আজ ১৫ অক্টোবর রবিবার পৌরসভায় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার মেলা শুরু হবে। ইতিমধ্যেই দোকান বরাদ্দের নামে অন্ততপক্ষে শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইজারাদার কাজী কাজল বলেন, 'আমরা পৌরসভার কাছ থেকে এক লাখ ৭ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। আমরা ডেকোরেশন ও লাইটিং খরচ হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে থাকি। অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয়না। আমরা চাঁদাবাজি নয় আমাদের জমির ভাড়া বাবদ কিছু টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ে থাকি।'
মাদারীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) সরোয়ার হোসেন বলেন, এটি ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এসব ঐতিহ্যবাহী মেলার জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে পুলিশ এমনিতেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। কারও বিরুদ্ধে যদি মেলায় চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত