সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমন ক্ষেতের পোকা দমন করার পাচিং পদ্ধতি। ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রোপা ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। সাধারনত এ আঞ্চলে কৃষকরা দুই ধরনের পাচিং ব্যবহার করেছে। লাইভ পাচিং ও ডেথ পাচিং। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে ধানের ক্ষেতে বালাইনাশক প্রয়োজন হয় না। একর প্রতি ক্ষেতে ১০ থেকে ১২ টি বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এ পাচিংয়ের (খুটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলে। এর ফলে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া কৃষকরাও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার গ্রাম গঞ্জের কৃষকদের ক্ষেত সবুজের সমারোহ। বাতাসে সবুজ শিষ দুলছে। ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পাচিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। তবে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর বাম্পার ফলন পাওয়ার উজ্জল সম্ভাবনায় কৃষকের চোখে মুখে উচ্ছলতা ফুটে উঠেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে প্রায় ৩৪ হাজার ৫ শ’হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার একশ হেক্টর উফশী ও ১০ হজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ধানের চাষ করা হয়েছে।
কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, ক্ষেতের ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় এ পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকটা কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
কৃষক আমির হোসেন জানান, এ বছর আমি ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই। অপর কৃষক জানান, বাড়ীর গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। এতে যেমন আর্থিক উপকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, পাচিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সকল কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার