ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে ৮ খাতের সাড়ে ২৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি দেওয়া হয়েছে। বিধি বহির্ভূতভাবে সরকারের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এই লুটপাটে ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদপ্তরের এক হিসাব নিরীক্ষন প্রতিবেদন থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট সেল সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার অধিকারী দায়িত্ব পালনকালে ৮টি খাতের ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৪ টাকার অনিয়ম করেন। এ বছরের পহেলা মার্চ স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আহমদ উজ্জল আপত্তির বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেন। ২৬২৯/এলএএস-২/নিঃপ্রঃ/১৯৯৩-১৫/১৭৩ নাম্বারের স্মারকে উল্লেখ করা হয়, ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে পরিপত্র বহিভুর্ত সমাজকল্যান খাত থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৫ টাকা, ম্যাগাজিন না ছাপিয়ে ওই খাত থেকে ২ লাখ টাকা, রেডক্রিসেন্ট ফি বাবাদ ১ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ টাকা, আয়কর ও উৎস করা না কাটায় রাজস্ব ক্ষতি ৭১ হাজার ৮১৮ টাকা, চুক্তি ব্যাতিত টিফিন সরবরাহ থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৯১ টাকা, ল্যাবরেটরী যন্ত্রপাতি খাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও অনিয়মিত ম্যাগাজিন তহবিল থেকে ৭৫ হাজার টাকার অনিয়ম করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমারকে ব্রডশিটের জবাব দিতে বলেন। কিন্তু তিনি জবাব দিলেও তা গ্রহন করেনি মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার অধিকারী মাগুরা সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে বদলী হওয়ার পরও দুর্নীতির মাধ্যমে তছরুপ করা টাকা সমন্বয় করতে স্কুলের দিবা প্রহরী ওসমান আলীর সহায়তায় রাধের আঁধারে স্কুলে ঢুকে জাল ভাউচার তৈরি করতে থাকেন। দিবা প্রহরী এই ওসমানকে বিধিবহির্ভূত ভাবে অফিস সহকারীর পদে বসানো হয়। এদিকে বদলী হওয়া একজন প্রধান শিক্ষকের রাতে অফিস করার বিষয়টি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানতে পেরে স্কুলের সব তালা পরিবর্তন করেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার মোকছেদুল ইসলামের সাথে যোগসাজস করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার অধিকারী। এরপর বিদ্যালয়ের নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে মেতে উঠেন। বিশেষ করে জাল ভাউচার তৈরীর মাধ্যমে হিসাব সমন্বয় করে ব্রডশিটের জবাব দিলেও গত ১৬ আগষ্ট শা-৩/১ এ অডিট-১৬০/২০০২/৭০৭ নং স্মারকে টাকা রিফান্ড করতে তাগাদা পত্র দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট ও আইন শিাখার উপ-সচিব অজিত কুমার ঘোষ সাক্ষরিত ওই চিঠিতে দ্রুত হিসাব সমন্বয় করে ব্রডশিটে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। এই চিঠিরও জবাব দিয়েছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার অধিকারী। অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক ক্ষমতাধর ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে সুনীল কুমার অধিকারী স্কুলের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা লোপাটসহ সরকারী গাছ বিক্রি করে দেন। ভর্তি নিয়েও তিনি জালিয়াতি করেন। দিতেন কোচিং বানিজ্যে উৎসাহ।
এ সব বিষয় জানতে পেরে ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক সফিকুল ইসলাম সুনীল কুমারকে বদলীর সুপারিশ করেন। কিন্তু তার খুটোর জোর থাকায় বদলী হয়নি। অবশেষে দুর্নীতি ও অনিয়মের অপবাদ মাথায় নিয়ে আড়াই মাস আগে তিনি বদলী হন মাগুরা জেলায়। অডিট আপত্তির বিষয়টি নিয়ে সুনীল কুমার অধিকারী সরকারী টাকা তুছরুপের কথা অস্বীকার করে বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেমন মন্ত্রনালয় থেকে অডিট করে, ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বালক বিদালয়েও সেমনটি করেছে। সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে কিছুটা অনিয়ম হয়। আমি ব্রডশিটে জবাব দিয়েছি। কিন্তু তাদের পচ্ছন্দ হয়নি। আমি আবারও দিয়েছি। তিনি বলেন এভাবে বারবার দিতে দিতে এক সময় মন্ত্রণালয় নীরব হয়ে যাবে। তখন আর জবাবের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না ।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার