এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় সৎ ভাই আমির হোসেনকে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হয় খালের পানিতে। পরে ঘাতক চক্রটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের নিকট বিচার চাইতে এসে নিজেরাই ফেঁসে গেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতের সৎ ভাই দেলোয়ার হোসেন, ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ সরকারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকের এসব তথ্য জানান, পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর জেলার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামের মো. হানিফার ছেলে দেলোয়ার হোসেন তার প্রতিপক্ষ একই এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুনসহ তার গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় সহযোগীদের নিয়ে গোপন বৈঠক করে। পরে দেলোয়ার তার সৎ ভাই আমির হোসেনকে মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে নৌকা নিয়ে সোনারগাঁ এলাকায় ডেকে নেয়। গভীর রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা বলে মেঘনা উপজেলার পাগাড়ি পাড়া এলাকায় খালে এসে নৌকার ভেতরই আমির হোসেনকে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেয়। গত ১৭ অক্টোবর এলাকার ওই খাল থেকে মেঘনা থানা পুলিশ আমিরের মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ সুপার জানান, দেলোয়ার সৎ ভাই আমিরের মরদেহ উদ্ধারের দিন ঘটনার পরিকল্পনায় জড়িত স্থানীয় চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ সরকার ও মেম্বার নুরুল ইসলামকে নিয়ে তার কার্যালয়ে এসে ঘটনার উল্টো বর্ণনা দিয়ে হত্যাকান্ডের জন্য তাদের প্রতিপক্ষ হুমায়ুন চেয়ারম্যান গ্রুপকে দায়ী করে। এক পর্যায়ে দেলোয়ার ওই দিন সন্ত্রাসীরা তার উপরেও হামলা করেছে বলে দাবি করে। সে পুলিশ সুপারকে তার রক্তমাখা একটি ফুল শার্ট দেখায়। শার্টের হাতায় রক্ত লেগে ছিলো। তবে দেলোয়ারের হাতের ওই অংশে কোনো কাটা দাগ ছিলো না। এবিষয় ধরে কথা বলতে গেলে আটকে যায় দেলোয়ার।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় সৎ ভাই দেলোয়ার ও তার সহযোগী একই গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে মানিকে আটকের পর উভয়ই আমিরকে খুন করার বিষয়ে বুধবার আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশ করেছে।
ডিবির এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই শাহ কামাল আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছে মেঘনার চালিভাঙ্গা গ্রামের মো.হানিফার ছেলে দেলোয়ার হোসেন, একই গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে মো. মানিক, আবদুল আউয়ালের ছেলে নুরুল আমিন মেম্বার, আবুল হাসেমের ছেলে সাইদুল ইসলাম ও চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মেঘনার মৈশেরচর গ্রামের করিম সরকারের ছেলে লতিফ সরকার। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করে এলাকায় মানবন্ধন হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামের হানিফা মিয়ার ছেলে আমির হোসেন ৫ বছর বয়সে মাকে হারায়। এরপর সৎ মায়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হলে বাবা পার্শ্ববর্তী ইসলামাবাদ গ্রামের মনসুর মিয়ার পরিবারে দত্তক দিয়ে দেয়। সেখানেই সাতবোনের আদরে বেড়ে উঠে আমির হোসেন। পালিত বাবার সংসারে সাতবোনকে নিয়ে গরু-বাছুর, কৃষিকাজ ও ট্রলার চালিয়ে জীবন কাটাতো। বিয়ের পর আপন পিতার সংসারে চলে আসে।
সূত্র জানায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই কারণে গত কয়েক বছরে এখানে একাধিক হত্যাকান্ডসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে গত ২০১২ সালের দিকে একই কায়দায় আমির হোসেনের পিতা হানিফ মিয়াকেও হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ফাঁসিয়েছিলো।
এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মুরশেদা বেগম বাদী হয়ে মেঘনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। নিহত আমির হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন