ঘুষ, দুর্নীতিতে মেতেছে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস। অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবাই অনিয়মের মধ্যেই দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত করছেন। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের সবাই যে যার মত করে অফিস করেন। আবার বাড়িতে ফিরে যান নিজের ইচ্ছামত। অফিসের কাজে কোন শিক্ষক কর্মচারী কাজ নিয়ে গেলেই চাওয়া হয় উৎকোচ। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ঝিনাইদহ জেলা বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষক আব্দুল মান্নানসহ একাধিক শিক্ষক বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানা যায়।
অভিযোগ ও অন্যান্যে সূত্র জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাবদ গাড়ির তেল খরচের জন্য ৮-১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মোটা অংকের টাকা ওই সিন্ডিকেটের হাতে দিতে হয়। না দিলে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি প্রদান করা হয় না। এই কাজের খোদ নেতৃত্ব দেন জেলা শিক্ষা অফিসার মোকছেদ আলী। তিনি নিজে অফিসে আসে সকাল ১০ টার পরে এবং ২ টায় চলে যান।
মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ডিজিটাল হাজিরা চালু করা হলেও অফিস ফাঁকি দেওয়ার কারণে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে অফিসের পরিদর্শকগণও ঠিক সময় আসেন না। অফিসে কোন কাজের জন্য শিক্ষকদের ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। এসব কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়িয়ে পড়ার মত।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদ আলী সরকারি বিধি মোতাবেক কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিজ জেলায় থাকার বিধান না থাকলেও উপরের মহলকে ম্যানেজ করে ০১/০৮/২০১৬ তারিখ থেকে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে ৪র্থ বারের মত ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার তিনি। একইস্থানে বারবার থাকার সুবাদে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই সিএন্ডবির পুকুর পাড়ে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের আলিশান বাড়ি। নিজ গ্রাম মহেশপুর উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের পান্তাপাড়া গ্রামে গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর ফার্ম এবং ২০ বিঘা জমির উপর তৈরি করেছেন মৎস্য খামার। গ্রামের মাঠে ৬৫ থেকে ৭০ বিঘা জমি এবং চুয়াডাঙ্গার জীবননগর বাজারে কোটি টাকা মূল্যের জমিও কিনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা অফিসার মকছেদ আলীর বাবার ৪ বিঘা জমি ছিল। এখন সেই মকছেদ আলী শিক্ষা অফিসের দুর্নীতির মাধ্যমেই পান্তাপাড়া গ্রামে বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
এব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মকছেদ আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিগত দিনে এই অফিসে যে সকল শিক্ষকরা দালালি করত। তারা এখন সেই সুযোগ পাচ্ছে না। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার
