ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক আনোয়ার ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্ত্রী নুরুন নাহার তানজিলা (২৮)। তানজিলা নিজেও একজন স্কুলশিক্ষিকা। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার শুখানপুকুরী লাউথুতি গ্রাম থেকে নির্যাতিত গৃহবধূ তানজিলাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক আনোয়ার হোসেন সদর উপজেলার শুখানপুকুরী লাউথুতি গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, স্কুলশিক্ষিকা তানজিলাকে বিয়ের পর থেকে পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক আনোয়ার শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। হঠাৎ গত ২০ দিন ধরে আনোয়ার স্ত্রী তানজিলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
শুক্রবার সকালে আনোয়ার নিজ বাড়ি শুকানপুকুরী এলাকায় যাওয়ার জন্য তানজিলাকে মুঠোফোনে কল দেয়। বিকেলে তানজিলা খালাতো দুই বোনসহ স্বামী আনোয়ারের বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গেলেই শ্বশুর হেলাল উদ্দিন, স্বামী আনোয়ারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তানজিলাকে বেধড়ক মারপিট শুরু করেন। এ সময় মাথা ফেটে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তানজিলা। স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এ সময় তানজিলাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও শ্বশুরবারির লোকজন আটক করে রাখে।
পরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তানজিলাকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ভর্তি করেন। এলাকাবাসী পরবর্তীতে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
নির্যাতিত গৃহবধূ স্কুলশিক্ষিকা তানজিলা জানান, দীর্ঘদিন সম্পর্কের পর আনোয়ারের সাথে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সে আমাদের বাড়িতে থাকত। মাঝেমধ্যে যৌতুকের জন্য চাপ দিত সে। সে আমার বাবার কাছে শহরে বাড়ি করে চায়। কিন্তু আমার বাবার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না।
নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে কলেজের প্রভাষক আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তানজিলার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরুল ইসলাম জানান, আনোয়ার নানা তালবাহানার পর চলতি বছরের ২৮শে মে তানজিলাকে বিয়ে করে আমার বাড়িতে থাকা শুরু করে। হঠাৎ আনোয়ার আমার মেয়েকে তার নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবারের সদস্যসহ তানজিলাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় আনোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শুকানপুকুরী ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, ইতিপূর্বে কলেজশিক্ষক আনোয়ার ও স্কুলশিক্ষিকা তানজিলার বিষয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আজ তানজিলা শ্বশুর বাড়িতে আসলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে শুনেছি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপ-পরিদর্শক বেলাল জানান, খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ঐ এলাকা থেকে উদ্ধার করে। দু'জনের সাথে কথা বলে পরবর্তিতে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে অভিযান চালিয়ে তানজিলার শ্বশুর হেলাল উদ্দিনকে আটক করেছেন। নির্যাতনের ঘটনায় তানজিলার বাবা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরবর্তীতে আইনগতভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় পড়াশুনার সুবাদে সদর উপজেলার শুখানপুকুরী লাউথুতি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সাথে ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়াল পাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরুল ইসলামের মেয়ে নুরুন নাহার তানজিলার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে গত ৭ বছর আগে তানজিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরি লাভ করেন। তানজিলা চাকরিতে যোগদানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রেমিক আনোয়ারের পড়াশুনার জন্য খরচের সহায়তা করতেন। এর মধ্যে আনোয়ার ৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষার শিক্ষা ক্যাডারে উর্ত্তীন হয়। তখন তানজিলা বিয়ের চাপ সৃষ্টি করলে আনোয়ার চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করতে রাজি হয়না।
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এবং আনোয়ার প্রতারণা করছে এমন সন্দেহে উপায় না পেয়ে তানজিলা আনোয়ারের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও থানায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে চলতি বছরের ১১ই মে একটি মামলা দায়ের করেন। কলেজে যোগদানের জন্য স্থানীয় ভাবে মামলার বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করে আনোয়ার। পরে আনোয়ার ধর্ষণ মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একই মাসের ২৮শে মে তানজিলার দাবি মেনে নিয়ে বিয়ে করেন।
বিডি প্রতিদিন/২৮ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল