ফরিদপুরের চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় ডাকাতের গুলিতে তিনজন নিহত ও আরও দুইজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চরভদ্রাসন উপজেলার মৃধাডাঙ্গী গ্রামে ও সদরপুর উপজেলার মুনশির চরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- চরভদ্রাসন উপজেলার মৃধাডাঙ্গী গ্রামের মো. সাজ্জাদ মৃধা (৩০), তার চাচাত ভাই সেন্টু মৃধা (২৮) ও সদরপুর উপজেলার মুনশির চরের মালেক খাঁ (৩৫)।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চরভদ্রাসন সদর উপজেলার খালাসীডাঙ্গী গ্রামের সামছেল ফকিরের বাড়িতে ১৫/২০ জনের একটি ডাকাত দল বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ডাকাতি করতে যায়। ডাকাত দলটি ঘরে ঢুকে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আরেকটি বাড়িতে ডাকাতি করার সময় গ্রামবাসীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এসময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পাশেই রাখা স্পিডবোর্ডে উঠে পালানোর চেষ্টা করে। তখন গ্রামবাসী ওই স্পিডবোর্টটি আটকাতে গেলে ডাকাতেরা গুলি চালায়। এতে ৪ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের রাতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার পর বৃহস্পতিবার ভোরে চরভদ্রাসনের মৃধাডাঙ্গী গ্রামের আয়নাল ফকিরের ছেলে সাজ্জাদ মৃধা, একই গ্রামের জেহের মৃধার ছেলে সেন্টু মৃধা ও সদরপুর উপজেলার মুনশির চরের মালেক খাঁ মারা যান। এছাড়া আশঙ্কাজনক থাকায় আলামিন ফকিরকে (২৫) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অপর আহত ব্যক্তি স্বপন বেপারী (২৪) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ডাকাতির কবলে পড়া গৃহকর্তা সামছেল ফকির জানান, তার ছেলের বিয়ের দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার। বিয়ের জন্য আনা স্বর্ণসহ মূল্যবান জিনিষপত্র ডাকাতেরা নিয়ে যায়। ডাকাত দলটি বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সকলকে বেঁধে ফেলে। চারটি দলে বিভক্ত হয়ে ডাকাত দলটি বিভিন্ন ঘরে গিয়ে ডাকাতি শুরু করে। পরে তারা মূল্যবান জিনিষপত্র ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
নিহত সেন্টুর ভাই লিটন মৃধা জানান, ডাকাত দলটি একটি স্পিডর্বোড নিয়ে ডাকাতির জন্য আসে। স্পিডবোর্ডটি তারা পদ্মা নদীতে রেখে গ্রামে ঢুকে একটি বিয়ে বাড়িতে ডাকাতি করে। পরে পুনরায় আরেকটি বাড়িতে ডাকাতির জন্য যায়। এসময় গ্রামবাসীরা টের পেয়ে ডাকাত দলটির স্পিডবোর্ডটি আটকানোর চেষ্টার সময় তারা গুলি ছুড়ে স্পিডর্বোড নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর পুলিশকে খবর দেয়া হলেও তারা আসেননি। ভোরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এর আগেও কয়েক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ ডাকাতদের কাউকেই ধরতে পারেনি।
এদিকে, সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের মুন্সীর ডাঙ্গী গ্রামে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ২২ থেকে ২৫ জনের একদল ডাকাত রিপন হাওলাদারের বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিষপত্র ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরে বাড়ির লোকজনের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে ডাকাত দলটি গুলি ছুড়ে। এসময় গুলিতে আব্দুল খালেক খাঁ (৩২) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বাড়ির গৃহকর্তা রিপন হাওলাদার জানান, ভোর ৪টার দিকে ২০-২৫ জনের একটি দল ঘরে ঢুকে সবাইকে হাত-পাঁ বেঁধে ফেলে। পরে তারা স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রামপ্রসাদ ভক্ত জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/০৯ নভেম্বর ২০১৭/এনায়েত করিম