মাদারীপুরে বর্ষা মৌসুমে অনাবাদী জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে পানিফলের। স্বল্প সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক ফলনও পাওয়া যায়। চলতি বছরই মাদারীপুরে এই ফল আবাদ করে লাভবান হয়েছেন হুমায়ুন কবির নামে এক কৃষক। ফলটি বেশ পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং ঔষধি হওয়ায় স্থানীয়রাও আগ্রহী হয়ে ফলটি কিনছেন।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে মাদারীপুর বিভিন্ন অনাবাদী জমিতে চাষ জনপ্রিয় হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এই পানি ফল পরিচিত 'পানি সিংড়া' নামে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trapa natans।
ডাসার থানার পূর্ব দর্শনা গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। শিক্ষিত এ যুবক মাদারীপুরে সর্বপ্রথম পানি ফলের আবাদ শুরু করেন। তিনি এবছর ১০ বিঘা জমিতে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে পানিফলের চাষ করেছেন। প্রতিদিন প্রায় ৫ মণ পানিফল বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রায় ২৫ জন কৃষি শ্রমিক এই কাজের সাথে জড়িত। প্রতি দিন পানিফল সংগ্রহ করে বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। বাজারে এখন পানিফলের দাম একহাজার টাকা মণ। পানিফল খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরে সহজেই চাষ করা যায়। জুন মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমে তখন সে পানিতে পানি ফলের চারা ছেড়ে দেয়া হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকে চারা গাছের সংখ্যা। গাছে গাছে ভরে যায় জলাশয়গুলো। পানিতে ছড়ানোর তিনমাস পর থেকেই এই ফল পাওয়া যায়। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং অক্টোবর মাসের শেষে ফল বিক্রি শুরু হয়। পানিফল লাল, একটু পরিপুষ্ট হলে সবুজ এবং সব শেষে কালো রঙ ধারণ করে। ফলের ভেতরের অংশে সাদা শাঁস। কাঁচা এবং সিদ্ধ দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
পানিফল চাষী হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের এলাকায় ধান কাটার পরে প্রায় ছয় মাসের জন্য কৃষকরা বেকার হয়ে পড়েন। এইসব অনাবাদী জমিতে ফসল ফলানো এবং বেকার কৃষকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমি পানিফল চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। কৃষি বিভাগ যদি কৃষকদের পানিফল চাষে আগ্রহী করে তাহলে অনেক কৃষক লাভবান হবে।
পানিফল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, মাদারীপুরে পানিফল নতুন বিক্রি করে শুরু হলেও এর অনেক চাহিদা। আমারা খুচরা ৪০/৫০টাকা কেজি বিক্রি করে থাকি।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক জিএসএ গফুর বলেন, অনাবাদী জমিতে এ অর্থকরী ফসল চাষে লাভবান হবে কৃষকরা। এতে করে একদিকে অনাবাদী জমিতে ফলবে ফসল আর বেকার কৃষকদের হবে কর্মসংস্থান। মাদারীপুরে এই ফসলটি নতুন আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকরা পরামর্শ ও সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই পাশে আছি।
বিডি প্রতিদিন/৯ নভেম্বর, ২০১৭/ফারজানা