এক সময় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকের ধান উৎপাদনে ব্যহত হলেও এখন সেই ভাবনা আর নেই ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের। হাতের নাগালে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাওয়ায় খরা মৌসুমেও স্বাচ্ছন্দে ধান আবাদ করছে কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগ বলছেন সেচ ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব সময় এগিয়ে উত্তরের এ জেলা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও সদরসহ ৫টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ মেঃ টন। আর গেল মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এ থেকে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২লাখ ৪১ হাজার ২১০ মেঃ টন।
জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়ন ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের চাষিরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ দিয়ে মাঠের পর মাঠ বোরো আবাদের জন্য জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভাল দাম পাওয়ার আশায় সময়মত ধান উৎপাদনে কেউ সেচ দিচ্ছেন কেউ আবার হালচাষ করে জমিতে চারা রোপনের উপযোগী করে তুলছেন। ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেল সেচ সুবিধায় গুরুত্ব রাখায় জেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন এ সুবিধা গ্রহণ করছেন। খরা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি কাজে আসছে সোলার প্যানেলের এই ভ্রাম্যমান সেচ ব্যবস্থাটি।
সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের সোলায়মান আলী কৃষকের সেচ ব্যবস্থায় ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের প্রথম উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তিন বছর আগে পরিক্ষামূলকভাবে সোলারের মাধ্যমে মটর দিয়ে তৈরি করা সেচ ব্যবস্থা দিয়ে প্রথমে নিজ জমিতে সেচ ব্যবস্থা চালু করে।
পরে স্থানীয় কৃষকরা তা দেখে উৎসাহিত হয়ে তার কাছ থেকে ভ্রাম্যমান সেচ ব্যবস্থা ক্রয় করে। এরপর জেলার কৃষকদের মাঝে তা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শুধু মাত্র সোলায়মান আলীর কাছ থেকে ১৯টি সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প ক্রয় করেছেন জেলার কৃষকরা।
একসময় জেলার কৃষকরা শ্যালো মেশিন ক্রয় করে সেচ ব্যবস্থায় নির্ভর ছিল। অন্যদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেচ সুবিধা থাকলেও সময়মত সেচ সুবিধা পেকে হয়রানির শিকার হতো। আর বিদ্যুত দিয়ে সেচ সুবিধা নিতে হলেও খরা মৌসুমে শুরু হয় ঘন ঘন লোডশেডিং। সবকিছু বিশ্লেষণ করে কৃষকরা মনে করছেন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাই সোলার প্যানেলে এ ব্যবস্থাটি এখন জনপ্রিয়।
সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মজিবর রহমান, আইয়ুব আলী, মোকলেসুর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, আগে বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে কৃষককে বিপাকে পরতে হতো। খরায় মাটি ফেটে ধান উৎপাদনে লোকসান গুনতে হতো। এখন ভ্রাম্যমান সোলারের সেচ ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা পাচ্ছে কৃষক। এ কারনে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছেন। তার কারন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সুবিধা না থাকলে কম করে হলেও একটি শ্যালো ১৫-২০ হাজার টাকায় ক্রয় করে সেচ দিতে হতো। এতে তেল ক্রয় মেশিন আনা, নেয়া, চুরি ও নস্ট হওয়ারও ভয় থাকতো। এখন তা লাগছে না।
বর্তমানে চুক্তি অনুযায়ী ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেল দিয়ে ধান উৎপাদন পর্যন্ত টাকা খরচ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৫শ টাকা। আর শ্যালো দিয়ে সেচ দিতে হলে খরচ হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ভোগান্তিতো রয়েছেই। তাই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ নিচ্ছেন জেলার কৃষকরা।
মোলানী গ্রামের ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থার উদ্যোগতা সোলায়মান আলী জানান, আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ৩ বছর আগে সেচ ব্যবস্থাটি চালু করি। এতে আমাকে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। ১টি ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থায় তৈরিতে খরচ হয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। আর সময় লাগে মাত্র ৩ দিন। এখন পর্যন্ত আমি জেলার কৃষকের কাছে ১৯টি ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের সেচ ব্যবস্থা বিক্রি করেছি। যা ১০-১৫ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রি করা হয়েছে। এ সেচ ব্যবস্থায় কৃষক ভরসা পাচ্ছে বলেই তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতিও কমছে। সরকার লাভবান হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাউদুদুল ইসলাম চলতি বোরো মৌসুমে জেলার কতগুলো ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলে সেচ সুবিধা চালু রয়েছে তার পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও তিনি জানান, এখন সেচ সুবিধা মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে। সেচ নিয়ে আর ভোগান্তি নেই কৃষকের। জেলার ৫টি উপজেলায় সোলার পাম্মেপর মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা নিয়ে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশা করছি চলতি মৌসুমেও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান