ইফতার তৈরীর কাঁচা মালামালের তেমন দাম না বাড়লেও বগুড়ায় ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতিটি ইফতার সামগ্রীতে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে।
বগুড়ার ইফতার সামগ্রীতে এখনো শ্রেষ্ঠত্ব দখল করে আছে ঐতিবাহি সাদা দই। দইয়ের পরের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের শরবত।আর বাহারী খাবের তালিকায় আছে হালিম, চিকেন ফ্রাই, কাটলেট, মাংসের কাবাব, ফিরনী, মাঠা, মিষ্টি দই, বুন্দিয়া, মুড়ি, খেজুরসহ আরো নানা কিছু।
জানা যায়, বগুড়া শহরের ষ্টেশন রোডে, সাতমাথা, কাঁঠালতলা, চেলোপাড়া, নবাববাড়ি রোড, কলোনী, রাজা বাজার এলাকা, ফতেহ আলী বাজার মোড়সহ বিভিন্নস্থানে ইফতার সামগ্রীর জন্য দোকান বসানো হয়। তবে পুলিশ প্রশাসনের তদারকির কারণে সড়কের পাশে যত্রতত্র ইফতার দোকান বসানো হয়েছে এবার কম।
সাধারণ মানের হোটেল রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চমানের হোটেলগুলোও ইফতার সামগ্রী বিক্রি শুরু হয় দুপুর থেকে। ইফতার সামগ্রী বিভিন্ন হোটেলে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়েছে। বরাবরের মত এবারো বগুড়ায় ইফতারিতে প্রদান আকর্ষণ ছিল সাদা দই।
সাদা দই ইফতারে কয়েকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাদা দই এর সাথে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে ঘোল হিসেবে, শুধু দই প্লেটে করে পরিবেশন, দইয়ের সাথে চিরা, দই মিষ্টি, দইয়ের সাথে খই ও মুড়ি, দই চিকেন রোস্ট, দই আর খাসির গোস্ত দিয়ে কোরমা তৈরীসহ বিভিন্নভাবেই খাবার তৈরী করা হয়।
বগুড়া জেলায় দই থেকে আরো বেশ কিছু খাবার তৈরী হয়ে থাকে। রমজানের রোজা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এই খাবারগুলো তৈরী হয়ে থাকে। তবে রোজা কে সামনে রেখে খাবার গুলোর চাহিদা একটু বেড়ে যায়। শরীরকে শীতল রাখা, হজমে কাজ করে বলে সাদা দইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। জনশ্রুতি রয়েছে বগুড়ার তৈরী সাদা দই শরীরের জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দইয়ের দামও হাতের নাগালে আকার অনুযায়ি ৫০ থেকে টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের ও নামের সাদা দই পাওয়া যায়।
দইয়ের পরের স্থানটায় দখল করেছে বিভিন্ন রকমের শরবত, লেবু, চিনির সাথে বিভিন্ন কোম্পানীর শরবতও সমানতালে ব্যবহার হয়ে থাকে। এরপরের স্থানটি দখল করে আছে হালিম। খাসি বা গরুর হালিম বগুড়ার ইফতার সামগ্রীতে দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবাটি হালিম বিক্রি হয়ে থাকে ৮০ টাকা করে। তবে গত কয়েক বছরে ধরে বগুড়ার ইফতার সামগ্রীতে বিভিন্ন মাংসের তৈরী খাবার বিক্রি শুরু হয়েছে।
জেলা শহরের জরেশ্বরীতলা, বিভিন্ন তারকা হোটেল, মোটেল, সাতমাথা, উপশহর, চকযাদু রোড এলাকায় এখন উল্লেখযোগ্যহারে বিক্রি হয় চিকেন গ্রীল, চিকেনে দিয়ে তৈরী রোল, রোস্ট, খাসির পায়া, খাসির রান রোস্ট, গরুর কিমা কাবাব, খাসি ও গরুর কাবাব, গরুর চাপ, মুরগি, মোরগ পোলাও, খাসির রোস্ট, কিমা, খাসির রান, কোয়েল, কবুতর ভুনা, বেগুনি, শাহী জিলাপি, শরবত, সুতি কাবাব, টিকা কাবাব, জালি কাবাব, আলুর চপ, দইবড়াসহ বাহারি আইটেমের ইফতার।
৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ শত টাকার মধ্যে এই মাংস দিয়ে তৈরী খাবারগুলো বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এছাড়া কালক্রমে ইফতার সামগ্রীতে এখনো শীর্ষে রয়েছে ছোলা, বুন্দিয়া, মুড়ি, ঝুড়ি, পিয়াজু। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এই ভাজা ইফতার সামগ্রী। গত বছর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজির ইফতার এবার বিক্রি হচ্ছে ১২০ তেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
বগুড়ায় ইফতার সামগ্রীকে ফলের ব্যবহারও বেড়েছে আগের থেকে কয়েকগুন বেশি। গত কয়েকবছর গ্রীষ্মকালিন সময়ে রমজান চলে আসায় গ্রীষ্মকালিন ফল আম, কলা, লিচু, আপেল খেজুরও বেশ ব্যবহার হয়ে থাকে।
বগুড়ার শহরের হোটেলে বুট, বুন্দিয়া, ঝুড়ি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি। ঝুড়ি ও চিড়া ১৬০ টাকা, কার্টলেট প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিচ, ফ্রাইড রাইস ২০০ টাকা কেজি, হালুয়া ১০, হালিম প্রতিবাটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিকেন রোল ৫০, চিকেন চিলি ৫০, চিকেন গ্রীল ফুল ৩৯০ আর কোয়াটার বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে। খাসির কাবাব প্রতি পিছ ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে।
টক দই ৫০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। সাদা মিষ্টি দই ১৮০ টাকা। আর সাধারণ বা খোলা বাজারে একই ইফতার বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। ইফতার ক্রয় করতে আসা ক্রেতারা জানান, গত বছরের চেয়ে এবছর ইফতার সামগ্রীর মূল্য বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ থেকে ৩০ টাকা করে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার হাতিবান্ধা এলাকার দই ব্যবসায়ি মিথন ঘোষ জানান, রমজান মাসে প্রচুর পরিমানে সাদা দই বা টক দইয়ের চাহিদা থাকে। এই রমজান মাসে চাহিদা মত দই বিক্রি করা যায় না। দুধের দাম বেশি বলে দই বিক্রি করে তেমন লাভও পাওয়া যায় না। বাপ দাদার ব্যবসাকে টিকে রাখার জন্য সেও এই পেশা করে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর