পার্বত্যাঞ্চলে এ বছর মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন বাহারি ফলের মৌ মৌ গন্ধ সুভাষ ছড়াচ্ছে পাহাড়ি জনপদে। নানা ধরনের এসব রসালো ফলের সয়লাব হয়েছে বাজার। প্রতিদিন বসছে মৌসুমী ফলের হাট। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ও উন্নত জাতের কাঠাঁল, আনারস, লিচু ও আম। রাঙামাটির বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে এখন চোখ জুড়ানো মৌসুমী ফলের সমারোহ। তাই চাহিদা অনেক, দামও কম। ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে মিলছে যে কোন ফল।
রাঙামাটি জেলা কৃষি তথ্য সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সদ্য মৌসুমে উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে রাঙামাটিতে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুর প্রচুর ফলন এসেছে। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলা সদর, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় আমের বাগান রয়েছে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। এসব বাগানে এবার প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ মেট্টিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তার মধ্যে রেগুয়াই ও আমরুপালির বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে ফলন ভালো হওয়ায় দেশি জাতের পরিবর্তে এখন অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুর। বোম্বে লিচুর ফলনও হচ্ছে উচ্চ পরিমাণে। শুধু রাঙামাটি জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে সাড়ে ১৭০০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর লিচুর উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৩০০ মেট্টিক টন। একই সাথে আনারস ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও কাঠাঁল আবাদ হয়েছে ১০হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমিতে। শুধু কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার মেট্টিক টন।
রাঙামাটির স্থানীয় মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী মো. নূরুল ইসলাম জানান, আনারসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে আম, কাঠাঁল, লিচু। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এসব মৌসুমী ফল উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর। তাছাড়া এসব উৎপাদিত মৌসুমী ইতিমধ্যে বাজারে সয়ালব হয়ে গেছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তবে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না এসব ফলমূল। রাঙামাটিতে প্রায় প্রতিদিন ২ থেকে ৩০০ ট্টাক মৌসুমী ফল নিয়ে রাঙামাটির বাইরে যাচ্ছে। এসব ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
অন্যদিকে, রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলায় কেবল সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বাজারজাতের অভাবে প্রতি বছর কোটি টাকার ফলমূল পচে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্তনৈতিক সম্ভবনা বিঘ্নিত হচ্ছে। সহজ পরিবহন ও সুষ্ঠু বাজারজাত ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে শুধু কাঁঠাল, আনারস নয় পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের কোটি কোটি টাকার ফল নষ্ট হচ্ছে। তাই দাবি উঠেছে তিন পার্বত্য জেলায় হিমাগার স্থাপনের।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাঙামাটি জেলাগুলোয় বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। বিশেষ করে উন্নত চাষাবাদের কারণে পাহাড়ে সব মৌসুমে যে কোন মৌসুমী ফল পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য পাহাড়কে এখন মৌসুমী ফলের দেশ বলা হচ্ছে। কৃষকরা যদি আরও একটু সচেতন হয় তাহলে এসব ফল উৎপাদনের ধারা ধরে রাখা সম্ভব হবে। তবে এ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল করতে পার্বত্যাঞ্চলে মৌসূমী ফল সংরক্ষণ ও কৃষকদের স্বার্থে হিমাগার স্থাপন খুবই প্রয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা