দিনাজপুরে শেষ হল হিন্দু ধর্মালম্বীদের ৩ দিনব্যাপী ৪৫তম মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নানযাত্রা উৎসব। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে ঝুলন যাত্রা থেকে রাখি পূর্ণিমার মাঝে সোমবার তিথিতে এই কৈলাশপতির মহাস্নানযাত্রা উৎসব পালন করেন হিন্দু ধর্মালম্বীর নারী-পুরুষরা।
গত শনিবার রাতে হাজার হাজার ভক্ত-পুণ্যার্থী বাসযোগে দিনাজপুর শহর হতে ৩৪ মাইল দূরে বীরগঞ্জ উপজেলাধীন মহুয়গাঁ গ্রাম শশ্মানঘাট মন্দির সংলগ্ন পূনর্ভবা নদীর উত্তরমুখী প্রবাহিত জল সংগ্রহ করতে যায়। সেখানে রাতব্যাপী কীর্ত্তন চলে। পরদিন রবিবার সূর্য দেখার পর উত্তরমুখী প্রবাহিত জল সংগ্রহ করতে নদীতে নেমে পড়েন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। সূর্য দেবতাকে প্রণাম করে সেই জল সংগ্রহ করে সেখানে অবস্থিত শিব মন্দিরে জল ঢেলে পুনরায় একই নিয়মে জল সংগ্রহ করে সেখানকার পুরোহিত দ্বারা সেই জল পবিত্র করে শহরের আনন্দ সাগরস্থ শ্রী শ্রী গোষ্ঠধাম প্রাঙ্গনে শিব মন্দিরের উদ্দেশ্যে নগ্ন পদব্রজে যাত্রা শুরু করেন।
পুরোহিত মাখনলাল চক্রবর্তী ও প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত-পুণ্যার্থীরা পূণ্য জল সংগ্রহ করতে আসেন।
অপরদিকে একই নিয়মে আনন্দ সাগর হতে সাতমাইল পূর্বে অবস্থিত কাঁউগাঁও-সাহেবগঞ্জ হাট সংলগ্ন আত্রাই নদীর উত্তরামুখি প্রবাহিত পুণ্যজল সংগ্রহ করেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তবৃন্দ। সেখানে থেকে পুণ্যজল সংগ্রহ করে নগ্ন পদব্রজে আনন্দ সাগর মন্দির অভিমুখে যাত্রা যান গোষ্ঠধাম শিব মন্দিরে।
দুই দিক থেকে পুণ্যজল সংগ্রহ করার পর ভক্ত-পুণ্যার্থীরা রবিবার রাতে আনন্দ সাগর এলাকায় শ্রী শ্রী গোষ্ঠ ধামে অবস্থান করেন এবং রাতব্যাপী কীর্ত্তন করেন ও শোনেন। পরে সোমবার ভোর ৪ টায় প্রথমে কমিটির পক্ষ থেকে শিব মন্দিরে শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢেলে পূজা-অর্চনা করা হয়। পরে শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালা শুরু করেন হাজার হাজার ভক্ত-পুণ্যার্থীরা। সকালে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরন করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
শহরের রাধে শ্যাম, চুনিয়াপাড়ায় পুতুল রানী বালা ও পুজা বালা এবং গোষ্ঠধাম মন্দিরে শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালতে আসা চকবাজারের মিতনি ঘোষ ও শিক্ষার্থী জ্যোতি তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, দেশ ও দশ যাতে ভালো থাকে সেজন্য এই পূজা করি। কারণ দেশের সবাই যদি ভালো থাকে তবে আমিও ভালো থাকবো। আবার কেউ এই পূজা করেন যাতে তার মনোবাসনা পূরণ হয়, লেখাপড়ায় ভলো করতে পারেন সে জন্য। কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন এই পূজা বা তীর্থ করা জন্য। কারণ এই পূজার মাধ্যমে শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢাললে স্বামীর আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং স্বামীর মঙ্গল হয়।
‘বলে বোম কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক অসোক আগরওয়ালা জানান, দিনাজপুরে ১৯৭৪ সালে এই মহাস্নানযাত্রা উৎসব শুরু করা হয়। পরে প্রতি বছর এই উৎসব পালন করা হয়। এটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কৈলাশপতির মহাস্নানযাত্রা।
তিনি আরও বলেন, যে কোন মনোবাসনা নিয়ে কেউ যদি মন থেকে এই শিবঠাকুরের পূজা করে তবে সেটি পূর্ণ করে হয়। সেই বিশ্বাস থকে প্রতি বছর আমরা মহাত্রিপুরারী কৈলাশপতির মহাস্নানযাত্রা পূজা করে আসছি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা