একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৩৬ ছিট মহলের কয়েক হাজার নতুন ভোটার। প্রায় ৭০ বছর পর এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে যাচ্ছেন।
১৯৭৪ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চুক্তির আলোকে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কাজ চূড়ান্ত হয়।
এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়, বিলুপ্ত ছিটমহলের। কয়েক হাজার মানুষ পায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।
এরপর সরকারের আন্তরিকতায় শুরু হয় উন্নয়নের কাজ। ৩৬টি ছিটমহলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোতগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়। রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণসহ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বিদ্যুতের আলো।
এদিকে নতুন ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হয় কয়েক হাজার ভোটার। এরই মধ্যে স্মার্ট কার্ডও পেয়ে গেছেন তারা। দীর্ঘ ৭০ বছর পর আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ ভোট দেবেন তারা।
জাতীয় সংসদের এই নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা। সারাদেশের মতো পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকরাও উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিতে চান।
গারাতী ছিটমহলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঘরবাড়ি ছিল না। পরিচয় ছিল না। এই সরকার সব দিয়েছে। এইবার ভোটও দিতে পারবো। আমার সব আশা পূর্ণ হয়েছে।
তহমিনা বেগমের ভাষায়, “স্মার্ট কার্ড পাইছি। ভোটের দিন সবাহে জামো ভোট দিবার। হামরা খুব খুশি।”
পঞ্চগড় জেলায় সংসদীয় আসন ২টি। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, পঞ্চগড়-১ আসনে ৭ টি ছিটমহলে মোট ভোটার হয়েছেন ১০২৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ৪৯৮ জন এবং পুরুষ ভোটার ৫২৭ জন। আর পঞ্চগড়-২ আসনে ২১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মোট ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ২২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৩ হাজার ২৭৫ জন । নারী ভোটার রয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ জন। ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে মোট ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৯৩৫ জন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, পঞ্চগড়ের ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটার তালিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তারা আইডি কার্ডও পেয়েছেন । আশা করছি, তারা প্রথমবারের মতো আনন্দ-উদ্দীপনার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম