সিরাজগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশে সন্তানদের ফেলে যাওয়া সেই বৃদ্ধার চিকিৎসা শেষে বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুরে ‘চাইল্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। সিরাজগঞ্জের মানবতার ফেরিওয়ালা বৃদ্ধাকে উদ্ধারকারী যুবক মামুন বিশ্বাস অভিভাবক হয়ে তাকে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
মামুন বিশ্বাস জানান, সিরাজগঞ্জ বাজার রেল স্টেশনে পড়ে থাকাবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ১০ দিন আগে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা মানবিক সাহায্য তুলে বৃদ্ধাকে চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি, দৈনিক মজুরিতে একজন খন্ডকালীন আয়া হাসপাতালে নিযুক্ত করে বৃদ্ধার দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি জানান, প্রায় ১ মাস আগে ষাটোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধাকে সিরাজগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশে ফেলে রেখে যান তার সন্তানেরা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ওই বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তিও আগে এতটাই দুর্বল ছিলেন কথা বলতে পারছিল। বর্তমানে সে কথা কিছুটা কথা বলতে পারছেন না।
মামুন বিশ্বাস বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বৃদ্ধার নাম ‘শ্যামলী’। অতীতে যাত্রাশিল্পী ছিলেন তিনি। ৪০ বছর যাত্রায় অভিনয়ও করেছেন তিনি। আদিবাসী থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ায় স্বজনরা তার কাছে থেকে দূরে সরে গেছেন। বগুড়ার দুপচাচিয়ার বাসিন্দা তিনি। একমাত্র ছেলে কালু যাত্রাদলের বাদক। হাসি ও খুশি নামে দু’টি মেয়েও রয়েছে তার। সিরাজগঞ্জ সদরের বিয়ারঘাট এলাকার আদিবাসী পল্লীতে তার বেশ ক’জন আত্মীয়ও আছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ায় যোগাযোগও নেই তাদের কারোর সঙ্গে। ২ বছর আগে সেই স্বামী মারা গেছেন। সন্তানদের কাছে অযত্মে অবহেলায় ছিলেন। অবশেষে তাকে আপদ ভেবে রেল স্টেশনের পাশে ফেলে যান নিজের ছেলে-মেয়েরা। ফেলে যাবার পর আদিবাসী স্বজনদের বলে গেছে, স্টেশনে রেখে গেলাম পারলে তোমরা খাবার দিয়ো।
মামুন বিশ্বাস বলেন, যথাসাধ্য চিকিৎসা শেষে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। বাকি জীবন একটু শান্তিতে থাকবে-এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম