কি হচ্ছে বগুড়ায় বিএনপির। বগুড়া জেলা বিএনপি পদ, কার্যক্রম, কর্মসূচি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা অর্ন্তদ্বন্দ্ব বয়ে চলছে। দ্বন্দ্ব প্রকাশ না করলেও সম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার আন্দোলন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা ফাটল ধরেছে।
এই ফাটল আর জোড়া লাগছে না। এবার বেশ প্রকাশ্যে এলো বগুড়ায় বিএনপির মাঝে দ্বন্দ্ব। পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিএনপি বড় ঝামেলায় রয়েছে। বগুড়ার বিএনপি অর্ন্তদ্বন্দ্বের জেরে এখন দুই ভাগ। একভাগ আহ্বায়ক কমিটির নিচে অপরভাগ প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির পাশে। দলীয় কোন্দলের কারণে বগুড়ার হিরো বিএনপিকে এখন যাচ্ছে জিরোর দিকে।
বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে বগুড়া জেলা বিএনপির তিন বছরের জন্য কার্য নির্বাহী কমিটি গঠন হয়। এই কমিটির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চান ৭ বছর পরিচালনা করার পর নতুন কমিটি গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে মতে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় অফিসে জেলা কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মতবিনিময় করার জন্য ডাক পড়ে।
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য জেলার নেতৃবৃন্দ আগ্রহী হয়ে উঠে এবং কেন্দ্রের নেতাদের সাথে লবিং শুরু করে পদ পেতে। এর এক পর্যায়ে গত ২৫ এপ্রিল জেলার নেতাদের সাথে মতবিনিময় ও কমিটি নিয়ে কথা বলতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তলব করা হয়। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উল্লেখ করে বগুড়ার নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয় যে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। জেলা বিএনপি’র একটি গ্রুপ এর প্রতিবাদ জানায়।
এ সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দেয়া নির্দেশনা হিসাবে আখ্যায়িত করলে হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডা বাধে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বাকবিতণ্ডার অভিযোগে অভিযুক্ত হন বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহ মেহেদী হাসান হিমু। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মতে অসৌজন্যমূলক আচরণের দায়ে তাদেরকে দলীয় পদ সহ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি প্রেরণ করে। এ নিয়ে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ২৫ এপ্রিল রাতে তালা লাগিয়ে দেয় বিএপি’র একটি গ্রুপ। ২৪ ঘণ্টা পরে তালা খুলে দেয়া হয়।
এর আগে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. আবদুর রাফি পান্না, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, জেলা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম, যুগ্ম সম্পাদক মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়েও কেউ কেউ অসন্তোষ। সিনিয়র নেতাদের একরোখা মনোভাবের কারণেই নাকি কেউ কেউ বহিষ্কার হয়েছেন। একদিকে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই অপর দিকে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে এখন চলছে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের জোর গ্রুপিং।
এরপর গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। সভায় বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় সর্বসম্মতিক্রমে।
বগুড়া জেলা বিএনপির ওই সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি
এ্যাড. একেএম হাফিজুর রহমান, অপর দুই সদস্য হলেন বিএনপি নেতা অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও এ্যাড. আজিজুর রহমান বকুল।
নির্বচন পরিচালনা কমিটি উপস্থিত সদস্যদের প্রস্তাবে ভিপি সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও জয়নাল আবেদিন চানকে যুগ্ম আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। এই আহ্বায়ক কমিটি ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে।
আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর জান যায়, বিএনপির অপর একটি অংশ এই আহ্বায়ক কমিটিকে মানতে নারাজ। বিএনপির ওই গ্রুপটি বিকালে বৈঠক করে একটি প্রস্তাবিত জেলা বিএনপির আহ্বাৎয়ক কমিটি গঠন করে। এই কমিটিকে তারা বলছেন প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ্যাড. মাহবুবর রহমানকে এবং বিএনপি নেতা ফজলুল বারী তালুকদার বেলালকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪৭ সদস্যের নাম প্রস্তাব করা হয়।
গতকাল সোমবার রাতে বগুড়া শহরের রিয়াজ কাজী লেনের সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদারের বাসভবনে বিএনপির পরামর্শ সভা থেকে আহ্বায়ক কমিটির জন্য নাম ঘোষণা করা হয় বিএনপি নেতা আলী আজগর তালুকদার হেনা, মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, ডা. শাহ মো. শাজাহানের নাম।
উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ বেশ কিছু বিএনপির নেতা-কর্মী। সোমবার দুপুরে একটি ও একই দিনে রাতে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়। এনিয়ে বিএনপির ভেতরের গ্রুপিং এখন প্রকাশ্যে চলে আসলো।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হিসেবে বগুড়াকে বিএনপির দূর্গ হিসেবে বলা হলেও এখন আর সে দিন নেই। সংসদীয় ৭টি আসনে বিএনপি জয়ী হলেও এখন জয়ী হয় মাত্র ২টি আসনে। বগুড়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বিপর্যস্ত বিএনপি এখন মাঠের রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাঁসা। এই জোটের জেলা পর্যায় থেকে মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। ফলে রাজনীতির মাঠ থেকে তারা এখন অনেক দূরে। কিন্তু কমিটি গঠন হওয়ার আভাস পাওয়ায় তারা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, কোনো কমিটি গঠন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা একটি আহ্বায়ক কমিটির প্রস্তাব করে সেটি চেয়ারপারনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে নেতারা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, দলের সিদ্ধান্ত মতে সবাইকে জানিয়ে ও পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে জেলা কার্যলয়ে সাধারণ সভার মধ্যে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে। কেউ যদি নিজের বাসায় বসে কমিটি গঠন করে তবে সে দায় তার বা তাদের। বিএনপির কমিটি এখন বিদ্যমান। আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি পাশ হলে জেলা কমিটিও বিলুপ্ত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন