নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে গৃহহারা পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত তিন দিন থেকে রোদে পুড়ে নিজেদের ভিটায় পড়ে থাকলেও বৃষ্টি নামলে তাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
জরুরি ভিত্তিতে তাবুর জন্য আকুতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের। এদিকে অনেকের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। কিছু এলাকায় সরকারিভাবে চাল বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম।
সরকারি হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ২২টি কাঁচা ঘর বিধস্ত হয়েছে। এতে ১ হাজারের অধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ে। আকষ্মিক ঝড়ে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো।
রবিবার বিকেল পর্যন্ত অনেক এলাকায় এখনো কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। কোথাও কোথাও এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রচণ্ড রোদে খালি ঘর ভিটায় পড়ে রয়েছেন তারা। অনেকে আত্ময়ী স্বজনদের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে ঠাঁই নিয়েছেন। বৃষ্টি নামলে তারা কোথায় যাবেন, কিভাবে থাকবেন সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছেন।
এদিকে রবিবার বিকেলে সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৫টি পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে ২০ কেজি করে চাল ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে নগদ এক হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়।
নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম সরদার দুর্গত এলাকা প্ররিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ দেয়া হয়।
এসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহম্মদ জানান, গৃহহারা পরিবারগুলোর কারো এখন আর ঘর তৈরি করার সামর্থ নেই। তাই সরকারিভাবে তাদেরকে ঘর তৈরির করে না দেয়া পর্যন্ত তাবুর ব্যবস্থা করা না হলে বৃষ্টির সময় তাদের কোনো উপায় থাকবে না।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু ওয়াদুদ গৃহহারা পরিবারগুলোকে খোলা আকাশের নিচে বাস করার কথা স্বীকার করে তাদের জন্য দ্রুত তাবুর ব্যবস্থা করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান।
জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল ও নগদ টাকা দেয়া হবে। এছাড়া যাদের বাড়ি-ঘর বিধস্ত হয়েছে তাদেরকে দ্রুততম সময়ে নতুন ঘর করে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
শনিবার ভোর রাতের দিকে চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে প্রচণ্ড ঝড়ে গাছপালা ও শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ঘর চাপা পড়ে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মো. ইসমাইল (২) নিহত হয়।
এছাড়া সদর উপজেলা ধর্মপুর ও নোয়াখালী ইউনিয়নে দুই শতাধিক কাঁচা ঘর বিধস্ত হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম সরদার জানান, ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ৬ শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধস্ত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন