চলতি বছর দিনাজপুরে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকট আর ধানের দাম কম থাকায় কৃষকের হাসি ম্লান হয়ে গেছে। বিশেষ করে বর্গাচাষিরা বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।
দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াই। কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হবে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্যের অভাবে দিশেহারা কৃষক। এবার ১ মণ ধানে দামেও মিলছে না ১ কেজি গরুর মাংস।
হাকিমপুর উপজেলার হাতিশোঁও গ্রামের কৃষক আশরাফুজ্জামান ও মাসুদ রানা জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষ করতে খরচ হয় মোট ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘাতে ধান হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ মণ। ধানের বাজার মূল্য প্রতি মণ প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বিঘা প্রতি ধান বিক্রয় হচ্ছে মোট ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আর তা থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে বিঘা প্রতি প্রকৃত ক্ষতি দাঁড়ায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা।
বর্গাচাষি ইমাম হোসেন জানান, ৪ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ১ বিঘা জমি বর্গা নেই। নিজেরাই শ্রমিক, স্ত্রী পরিবার পরিজন নিয়ে নিজেরাই জমি চাষ করি। নিজেদের শ্রমের হিসাব বাদ দেওয়ার পরও আমাদের ক্ষতি হচ্ছে বিঘা প্রতি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা।
কৃষক আব্দুল কাদের রানা বলেন, রোদ-বৃষ্টি কাদা-পানিতে শরীর পুড়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে কঠোর পরিশ্রম করে কিছু লাভের আশায় ধান উৎপাদন করি। আর তার বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি? ১ মণ ধানের টাকা দিয়ে ১ কেজি গরুর মাংসও পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক তদারকি এবং দিক নির্দেশনার কারণে জেলায় এবারে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩২৪ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত ধান থেকে এবার ৭ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।
জানা যায়, সরকারিভাবে এ বছর জেলায় ৯৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনা হবে। এছাড়া আগামী ১৮ মে থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল