শরীয়তপুরে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে চাতালকলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকলেও খাদ্যগুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চাল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল সংগ্রহ করছেন। তাও নিম্নমানের চাল। এ জন্য চাতালকলের মালিকেরা গুদামের কর্মকর্তাদের টাকা ঘুষ দিচ্ছেন বলে জানা যায় । তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র মতে, এ বছর শরীয়তপুরে সরকারিভাবে ১ হাজার ৬১৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার কথা। এরমধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলা খাদ্যগুদাম ৩৫৫ মেট্রিক টন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম ২৫৯ মেট্রিক টন ও ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদাম ১ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কথা রয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল জেলার ১২ জন চাতালকলের মালিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, গত ৯ এপ্রিল চাতালকল মালিকগণ ধান থেকে চাল সংগ্রহ করার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকার শরীয়তপুর থেকে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে।
জানা যায়, মিলিং লাইসেন্স ও ফুট গ্রেইন লাইসেন্সধারী প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সম্পন্ন সচল মিল হতে হবে। মিলে বয়লার ও চিমনী থাকতে হবে এবং প্রধান বয়লার পরিদর্শকের প্রাপ্ত সনদ থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মিলে এ ধরনের কোন কিছুই নেই।
এ ব্যাপারে চাতালকল পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, মিলের তালিকা অনেক আগে হয়েছে। সেই অনুযায়ি মিলগুলো চাল বরাদ্দ দিচ্ছে। যে মিলগুলোতে সরকারের চুক্তি অনুযায়ি বয়লার, চিমনী ও সনদ নাই আগামী বছর সেগুলো বাতিল বলে গণ্য হবে।
আরও জানা যায়, গত ১৩ মে থেকে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী, চাতালকলের মালিকেরা স্থানীয়ভাবে নতুন চাল সংগ্রহ করে তা সরকারকে দেবেন। কিন্তু খাদ্যগুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিয়ে ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, নড়াইলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকযোগে ভোর রাতে চাল গুদামে ঢোকাচ্ছেন। আর কাগজে-কলমে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের নামে চাল সরবরাহ হচ্ছে বলে উল্লেখ করছেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে তড়িঘড়ি করে চাল ঢোকানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকদের দায়িত্বে আছেন আনোয়ার সরদার।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার খাদ্য গুদামে পঁচা ও নিম্নমানের চাল ঢুকাচ্ছেন এমন তথ্য শুনে সংবাদ কর্মীরা গত ১৩ মে সকাল ১০টার দিকে গুদামে যান, দেখেন ফরিদপুর থেকে আশা ট্রাক ভর্তি চাল, নামাচ্ছেন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ আলম দিনা কিছু বলতে রাজি নন।
সোনালী রাইস মিল নামক চাতালকলের মালিক আবুল কালাম তালুকদার বলেন, আমার মিলের নামে জনৈক ব্যবসায়ী টাকা খরচ করে লাইসেন্স করেন। আমি কখনো গুদামে চাল দেইনি। আমার মিল সরকারি নিয়ম মেনে চাল উৎপাদনে অনুপোযোগী। শুনেছি এবছরও ১৫৫ টন চাল আমার মিলের নামে বরাদ্দ পেয়েছে। ২৩ টন চাল গুদামে দেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে নির্ধারিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রব হাওলাদার। কিন্তু আমার মিল থেকে এক ছটাক চালও দেয়া হয়নি। যতটুকু শুনেছি ঝিনাইদহ জেলা থেকে চাল ক্রয় করে তা গুদামে দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় মোকলেছুর রহমান, আলী হোসেন চৌকিদারসহ অনেকেই বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তারা স্থানীয় মিল থেকে চাল সংগ্রহ করেন না। তারা বিভিন্ন জেলা থেকে চাল কিনে ট্রাকে করে গুদামে ঢুকান। যা পঁচা ও নিম্নমানের চাল।
ডামুড্যা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ডামুড্যা থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কথা। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ২৩৬ মেট্রিক টান চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে মিল পরিদর্শক রয়েছে। চাল কিনা ও চাতালকল নিয়ে অভিযোগ আমার এখানে নেই। কোন অনিয়ম থাকলে তা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও পরিদর্শক তদারকি করবেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খন্দকার নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পঁচা ও নিম্নমানের চাল খাদ্যগুদামে ঢুকানো হয়েছে এটা ভিত্তিহীন। তাছাড়া অন্য জেলা থেকে চাল সংগ্রহ করা যাবে না। সম্পূর্ণ চাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে হবে। চাল সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হলে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, সরকারি যে নীতিমালা রয়েছে সেই অনুযায়ী মিলের মালিকরা বাহির থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারবে না। যদি সংগ্রহ করে ও নিম্নমানের চাল দেয়া হয়। নিম্নমানের চাল খদ্যগুদামে ঢুকানো হয়। সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা