প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি। কাপ্তাই হ্রদ, পাহাড় আর ঝর্ণার সমারোহে এ শহর গড়ে উঠেছে নিজস্ব স্বকীয়তায়। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে যে কোনো উৎসবেই ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। প্রাকৃতিকভাবে ভরপুর বৈচিত্র্য থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। তাই বেড়াতে এসে আকর্ষণ হারাচ্ছে পর্যটকরা। অপার সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঢেলে সাজানো গেলে এ অঞ্চলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যেমন আনাগোনা বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এ অঞ্চলের মানুষ। সুবলং ঝর্ণা, ঘাগড়া কলাবাগ ঝর্ণা, পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই আসামবস্তি সড়ক ও ফুরামন পাহাড়ের মত এমন অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে। এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অস্তিত্ব ধরে রাখতে হলে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে দেশের এক দশমাংশ জায়গা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল গঠিত। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও বৈচিত্র্যে ভরপুর রাঙামাটি। এর পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য, উত্তরে খাগড়াছড়ি ও দক্ষিণে বান্দরবান জেলা। রাঙামাটির আয়তন ৬ হাজার ৪৮১ বর্গকিলোমিটার। এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম লেক, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বেতবুনিয়া উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র ও কর্ণফুলি পেপার মিল এই জেলায় অবস্থিত। এমনই আরও অনেক প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলনে রাঙামাটি জেলা গর্বিত। এ অঞ্চলে প্রতিটি জনগোষ্ঠিরই রয়েছে নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যপূর্ণ সামাজিকতা। যার টানে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন রাঙামাটিতে।
অভিযোগ রয়েছে, সত্তর দশকের শেষদিকে রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর পর্যটকদের সুবিধার্থে ১৯৭৮সালে পর্যটন করপোরেশন মূল মোটেলটি এবং ১৯৮৬সালে অডিটোরিয়াম ও দু’টি পাহাড়ের সংযোগ দেয়া কাপ্তাই হ্রদের ওপর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। সে সময় ৩৩৫ফুট দীর্ঘ মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি পর্যটন কমপ্লেক্সের গুরুত্ব ও আকর্ষণ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এরপর একবারও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়নি পর্যটন ঝুলন্ত সেতু ও অডিটোরিয়ামটির। এখানে নেই শিশুদের জন্য খেলার স্পট। নামে পর্যটন হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও পর্যটকদের জন্য করা হয়নি সুব্যবস্থা। উল্টো গাড়ি পারকিং প্রবেশ মূল্য করা হয়েছে দ্বিগুণ। এতে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে রাজস্ব আয়। তবে উন্নয়নের রেশমাত্র নেই এখানে। অযত্নে অবহেলায় বিলিন হয়ে গেছে পর্যটনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তবে এর দায় নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, রাঙামাটিতে অপার সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। রাঙামাটি পর্যটন জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগ হলেও পর্যটন বিষয়ে নেই তাদের কোন আন্তরিকতা। তাদের সমন্বয়হীনতার অভাবে কোনো প্রস্তাবনাই বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
অন্যদিকে রাঙামাটি জেলা পরিষদে পর্যটন হস্তান্তর করা হলেও পুরোপুরি হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেক আহমেদ। তিনি বলেন, রাঙামাটি কেউ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই জেলা পরিষদের সাথে পরামর্শ করে করতে হবে। জেলা পরিষদও চায় রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্রগুলো উন্নয়ন হোক। তার জন্য গেলো বছর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটন উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে পকল্প মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন হয়নি। তাই কাজও হয়নি।
এদিকে শুক্রবার পর্যটন দিবস উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৯টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি ও রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমির সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন