১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ১৫:৩৭

জেলা শহর বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে পাসপোর্ট অফিস

নাটোর প্রতিনিধি :

জেলা শহর বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে পাসপোর্ট অফিস

নির্মাণাধীন আব্দুস সালামের মার্কেট

নাটোরে জেলা শহর রেখে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে পাসপোর্ট অফিস। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা এরুপ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলেও বিবেচনায় নেয়া হয়নি তা। অপরদিকে, এক ব্যবসায়ীর নির্মাণাধীন ৪তলা মার্কেট অধিগ্রহণ করা হলে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন ঐ ব্যবসায়ী। তার দাবি, তিনি ঐ  জায়গার উপর ব্যাংক থেকে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা ঋণ  গ্রহণ করেছেন । এ ব্যাপারে লিখিত আপত্তি জানালেও তা বিবেচনায় নিচ্ছে না জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। এছাড়া জেলা শহরের বাইরে পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ করা হলে সেখানে যাতায়াতের জন্য জেলাবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। 

নাটোর শহরের মল্লিকহাটি মহল্লার ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, তিনি একজন বেকারি ব্যবসায়ী। নিজ বাড়ির আঙিনায় বেকারি সামগ্রী তৈরির জন্য প্রতিবেশীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তিনি শহরের বাইরে বড় হরিশপুর ইউনিয়নের বড়হরিশপুর মৌজায় বিভিন্ন সময়ে জমি ক্রয় ও এওয়াজ-বদল করে ১২৫৭.১২৫৮.১২৫৯ ও ১২৬০ দাগে মোট ৪১ মতাংশ জমির মালিক হন। এরপর ঐ জমির সামনে মার্কেট ও পিছনে কারখানা নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। যা বর্তমানে সুদ-আসলে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা হয়েছে। এরপর উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে মার্কেট নির্মাণের অনুমতিক্রমে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ডসহ দ্বিতল ভবন নির্মাণ শুরু করা হয়। দোকান ঘরগুলোর ছাদ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ অবস্থায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর তার ওই জমির সন্মুখভাগে মার্কেটের জন্য নির্মিত ভবনের ২৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য পত্র পান এবং আপত্তি থাকলে ১০ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে দাখিলের জন্য নাটোর জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে পত্র পান। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর তিনি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের ভূমি হুকুম দখল শাখায় লিখিত অপত্তি দাখিল করেন। এরপর গত গত ৫ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি দাবি করেন, তার বর্তমান জমির মূল্য শতাংশ প্রতি প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত হওয়ায় শতাংশ সরকারি গড় মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা শতাংশ। এছাড়া তিনি দোকান ঘর ইজারা দিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। কারখানার  জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মেশিনারি ক্রয় করেছেন। এ অবস্থায় ওই জমি অধিগ্রহণ করা হলে তিনি পথে বসবেন। 

এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, গত নভেম্বর জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাবিত জায়গায় পাসপোর্ট অফিস না করে কালেক্টরেট অফিসের সামনে অথবা শহরের মধ্যে কোন ফাঁকা জায়গায় করার প্রস্তাব করা হয়। কারণ ফাঁকা জায়গা অধিগ্রহণ করা হলে সরকারের ব্যয় সাশ্রয় হবে। ঐ সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশ একমত পোষণ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে শহরের বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ আমাদের বোধগম্য নয়। শহরের বাইরে পাসপোর্ট অফিসে যাতায়াতের জন্য লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। 

এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আলী আশরাফ জানান, তার আগের কর্মকর্তারা ওই জমি সিলেকশন করে অনুমোদনের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক উর্ধতন কর্মকর্তাদের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঐ জায়গা অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পাসপোর্ট অফিসের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আপত্তি উত্থাপনের কথা স্বীকার করে বলেন, সেখানে অন্যত্র জমি দেখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস অনড় থাকায় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপত্তির শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর