১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:২৪

প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জনের ধর্ষণে ৪র্থ শ্রেণির স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জনের ধর্ষণে ৪র্থ শ্রেণির স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা

৪র্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।

বরিশালে ৪র্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ দুই প্রতিবেশী এই ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছে ওই স্কুলছাত্রী ও তার মা। 

অপরিণত বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ওই ছাত্রীর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এদিকে, এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। 

গত ১০ ডিসেম্বর রাতে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভোজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ওই ছাত্রীকে (১২) শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় প্রসব বেদনায় কাতর শিশুটির চোখে-মুখে শুধুই বিস্ময়ের ছাপ। মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে সে। 

শিশুটি জানায়, প্রায় ৯ মাস আগে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে প্রথম ধর্ষণ করে। অপর এক নারী শিক্ষক এই ধর্ষণে সহায়তা করে। এরপর এই খবর স্থানীয়ভাবে লোকমুখে জানাজানি হলে দুই প্রতিবেশী জুয়েল ও রনি ফাঁকা বাসায় ঢুকে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর নির্যাতিতার মা প্রতিবাদ করে বিচার চাইলে তাকেও মারধর করার অভিযোগ ওঠে ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তিনি অভিযুক্তদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তি চান। 

স্কুলছাত্রীটিকে হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়া মানবাধিকার কর্মী মো. সুজনসহ হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন। 

শের-ই বাংলা মেডিকেলের প্রসূতি বিভাগ-২ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মৃদুলা কর জানান, ওই স্কুলছাত্রীর গর্ভের প্রকৃত অবস্থা জানতে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত টাকার অভাবে তার কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেনি তার পরিবার। পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই তার শারীরিক অবস্থা জানা যাবে। তবে অপরিণত বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ওই শিশুর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।  

এদিকে, এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ধর্ষণকারী শিক্ষক ও দুই প্রতিবেশীর নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি বলে জানায় নির্যাতিতা। এমনকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার আগে ফরিদপুর ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং স্কুলের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের নাম বলতে নিষেধ করে। প্রধান শিক্ষকের নাম বললে সে কোনও বিচার পাবে না এবং লোকে তাকেই বরং খারাপ জানবে বলে তাকে ভয়ভীতি দেখায় বলে অভিযোগ করেন স্কুলছাত্রীটি। দায়সারা গোছের তদন্ত শেষে পুলিশও ওই মামলায় জুয়েল নামে এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ওই মামলায় বর্তমানে জুয়েল কারাগারে রয়েছে। 

সংবাদ কর্মীদের কাছে এ খবর জানার পরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্যাতিতাকে দেখতে হাসপাতালে যান বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ওই স্কুলছাত্রীর চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেন এবং এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। মামলার অভিযোগপত্র থেকে কেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যদের বাদ দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন পুলিশ সুপার। 

নির্যাতিতা ওই স্কুলছাত্রী ৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার মা বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে এবং বাবা সবজি বিক্রি করে। প্রধান শিক্ষকের ধর্ষণের শিকার হয়ে সে পাশের একটি স্কুলে গিয়ে ভর্তি হলেও অভিযুক্ত শিক্ষকরা ফের তাকে পূর্বের স্কুলে ভর্তি করেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় এবার ৪র্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও দিতে পারেনি সে।
 
 

বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর