শিরোনাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৮:১৭

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত

নিহত ইয়াসিন শেখ।

ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন শেখ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্য।

রবিবার দিবাগত রাত দুইটার সময় শহরের পূর্বখাবাসপুরস্থ লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াসিন শেখ শহরের ওয়ারলেস পাড়ার মনি শেখের পুত্র। তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামির ছবি সংগ্রহ করে ইয়াছিনকে চিহিৃত করা হয়। এরপর জনগণের সহয়তায় তাকে আটক করা হয়। রাতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামির অন্যান্য সহযোগী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয়। আর এসময় গুলিবিদ্ধ হয় আসামি ইয়াছিন। আর এ ঘটনায় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য। 

পরে ইয়াসিনকে উদ্ধার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে বিকেল বেলা রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াছিন নামে ওই ধর্ষক। পরের দিন পাশের টেলিগ্রাম অফিসের পাশ থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা কিশোরী ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দু’টি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় সনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয় মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা।

ডিস্ট্রিস্ট পুলিশ, ফরিদপুর নামের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্রান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। 

প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায় সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাঁশের খুঁটির নিকট এসে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেখানে তার গতিবিধিই ছিল সন্দেহজনক। 

এরপরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে সনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরনে ছিল কামিজ ও কমলা রঙের একটি পায়জামা। এই পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সাথে জব্দ করে। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরেরদিন শুক্রবার সন্ধার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয়ের চত্ত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ছিলো। রক্ত জমাট বাঁধা। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেওয়া ছিলো। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনো ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।

বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী ফাতেমার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খবরে ফরিদপুরের জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই খুনিদের যেকোন মূল্যে খুঁজে বের করার জোর দাবি উঠে। 

এ ঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রী শিশু ফাতেমা হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচারের বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে। গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়। 

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন। বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রগতিশীল সংগঠন সমূহের ব্যানারে।


বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর