শীতকালের পৌষ মাসের শুরু থেকেই শীতে কাঁপছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার পাহাড়ি জনপদের মানুষ। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। বিশেষ করে পাহাড়ের অভ্যন্তরে ও পাদদেশে বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের শীতের কারণে কষ্ট বাড়ছে। বাদ পড়ছে না গবাদি পশুরাও।
গত কয়েকদিন ধরে সমগ্র বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে কনকনে শীতের মহড়া। শীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসেছে প্রচণ্ড শীত। এখানকার খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের। এসব অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ পাহাড় থেকে গাছ, বাঁশ, লাকড়ি ও খড়কুটা সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।
সরই ইউনিয়নের হাছনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, উপজেলা সদর থেকেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়ে বেশি। সেই হিসেবে গরীব পাহাড়ি ও বাঙালিরা সরকারিভাবে তেমন কোন শীতবস্ত্র পায় না। গজালিয়া বাইশপাড়ি এলাকার এনুচিং মার্মা (৩৬) বলেন, সমতলের চেয়ে পাহাড়ে শীত পড়ে বেশি। বেলা ১০টার আগে সূর্য দেখা পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে হয়। সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে শীত নিবারণের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ লেপ-তোশকের দোকানে ভীড় করছেন। ছিন্নমূল আর গরীব মানুষগুলো ভীড় করছেন ফুটপাতের পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে। হত দরিদ্র মানুষেরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। তারা সরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
লামা বাজারের লেপ-তোশক দোকানের মালিক মো. মামুন বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এইসময় বেচাবিক্রি বেশি হয়। যার যার সাধ্যের মধ্যে লেপ-তোশক তৈরি করে শীত নিবারণ করে। এদিকে প্রচণ্ড শীতে বোরো ধান লাগানোর কাজ রেখে বেকার সময় পার করছে শ্রমিকরা। অন্যদিকে, উপজেলার হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা দুর্যোগ মন্ত্রণালয় হতে বেশ কিছু শীতের কম্বল ও সামগ্রী বরাদ্দ পেয়েছি। গরীব অসহায় মানুষ, এতিমখানা, শিশুসদন, হাসপাতাল ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে এইসব শীত সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক