বরগুনার পাথরঘাটায় চুরির অভিযোগ মাহতাব (১৪) নামের এক শিশুকে পিটিয়ে জখম করেছে দুই ভাই আ. খালেক ও আবু সালেহ। এ ঘটনার পর প্রভাবশালী ওই সহোদর ব্যবসায়ী বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। এর আগে রবিবার বিকেলে উপজেলার হাতেমপুর গ্রামের হাতেমপুর বাজারে এ নির্মম ঘটনা ঘটে।
অনাথ শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করায় এলাকার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়নি। শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছর আগে শিশু মাহতাবের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। পরে বাবার বাড়িতেই বড় হয় মাহাতাব।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনার বিকেলে উপজেলার হাতেমপুর বাজারের খালেকের দোকানের ভেতর থেকে মাহতাবকে চোর সন্দেহে আটক করে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর খালেক ও তার ছোটো ভাই সালেহ এবং অপর এক দোকানদার মাহতাবকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে ওই তিনজন শিশুটিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়নি।
পরে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয় গ্রাম পুলিশকে খবর দিলে গ্রামপুলিশ পাথরঘাটা থানায় বিষয়টি জানায়। পাথরঘাটা থানার এস আই মোশাররফ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
চিকিৎসাধীন মাহতাব জানায়, সে চুরি করেনি। প্রায়ই বাজারে ঘুরাফেরা করে মাহতাব। তাকে অন্যায়ভাবে মারধর করেছে বলে মাহতাব দাবি করে। সে জানায়, তার হাতে পায়ে দোকানি সালেহ কামড় দিয়েছে।
শিশুর মামা মো. ইব্রাহিম বলেন, বাবার নাম মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া। মাহতাবের ৩ মাস বয়সে তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে মাহতাবের মা-বাবা উভয়েই দিয়ে ২য় বিয়ে করে সংসার করছেন। ফলে সে পিতৃমাতৃহীন অনাথ জীবনযাপন করছে। ক্ষেত খামারে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে মাহতাব। ছোট থেকে আমাদের কাছেই বড় হয়েছে। মাহতাবকে অন্যায়ভাবে চুরি সাব্যস্ত করে মারধর করেছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, শিশু নির্যাতন এটি আইন দণ্ডনীয় অপরাধ। ওই শিশু যদি চুরি করেও থাকে তাহলে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা উচিত ছিল। নিজেদের হাতে তুলে আইন যারা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, মাহতাব মুলত ছিন্নমূল শিশু। মা বাবার আদর পায়নি। এখন স্নেহহীন ছন্নছাড়া জীবন যাপন করে শিশুটি। তাকে পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে বাবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অভিযুক্ত সালেহ ও খালেকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা