‘তাদেরকে আল্লাহর কসম দেই, আমার সন্তানের কসম দেই ও প্রাণভিক্ষা চাই। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে তারা বারবার কলেমা পড়তে বলছিলেন। এসময় আরডিসি নাজিম উদ্দীন অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেন। আমি অনেক আকুতি মিনতি করি।’-উপরোক্ত কথাগুলো কুড়িগ্রামের বাংলা টিব্রিউনের জেলা প্রতিনিধি অসুস্থ আরিফুল ইসলাম রবিবার দুপুরে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার সহকর্মী সাংবাদিকদের বলেন।
আরিফুল আরও জানায়, অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমাকে বলা হয় তুই কলেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টারে দেওয়া হবে। পরে আমাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে অমানবিক নির্যাতন করে তা ভিডিও করা হয়।
আরিফুল ইসলাম আরও জানায়, চোখ বাঁধা অবস্থায় আমার কাছ থেকে জোর করে ৪টি কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে তাড়াহুড়ো করে আমাকে জেলখানায় প্রেরণ করে। আমার হাতে, পায়ে ও পিঠে প্রচণ্ড মেরেছে যা আপনারা এর আঘাতের চিহ্ন স্বচক্ষে দেখছেন।
জামিনে মুক্তি পাওয়া নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে জানায়, আমি হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা আমার অসম্মতিতে হয়েছে। আমাকে ফোর্স করে করানো হয়েছে। জেলখানা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বেডে শুয়ে এসব কথা বলে আরিফুল।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেনারেল হাসপাতালে এসে বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। জেনারেল হাসপাতালের আরএমও রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব জানান, আরিফুল ইসলামের শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং রিপোর্ট হাতে আসলে প্রকৃত অবস্থা বলা যাবে।
এদিকে রবিবার জামিন প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তার স্ত্রী, বোন ও মামাতো ভাইসহ অনেকেই। জামিনের খবর শুনে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে পূর্ব নির্ধারিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি বাদ দিয়ে সকল সাংবাদিক ডিসি অফিসে গেলে জানা যায় তার জামিন হয়েছে। তার পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন জানান, আরিফুলের সম্মতিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজা উদ্দৌলার আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাড. আব্রাহাম লিংকন এবং আরিফুলের পক্ষে ছিলেন অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন ও অ্যাড. আহসান হাবীব নীলু। তাকে ২৫ হাজার টাকার বন্ডে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. আহসান হাবীব নীলু’র জিম্মায় জামিন দেয়া হয়।
বলা হয়েছে, এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে আরিফুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারতে মারতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দেয়া হয়।
আরিফুলের বড় বোন রিমা জানান, আমরা কোন কাগজে স্বাক্ষর করিনি, আপিলও করিনি। আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি তার অফিসের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। অফিসের লোকজনের পরামর্শে আমাদের আপিল করার কথা ছিল। আরিফুলের মামা নবিদুল ইসলাম জানান, আমরা ডিসি অফিসে এসেছি নথিপত্র তোলার জন্য। কিন্তু এসে জানতে পারলাম তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা অফিস থেকে বাংলা ট্রিবিউনের মফস্বল ইনচার্জ শাহ আলমসহ একটি টিম এসে আরিফুলের বাড়িতে যান। সেখানে শাহ আলম সাংবাদিকদের জানান, যতটুকু জেনেছি তাকে আরডিসি অফিসে বিবস্ত্র করে অনেক টর্চার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জনপ্রশাসন বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন কুড়িগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়ে দুপুর ২টায় মোবাইলে জানান, তদন্ত্র প্রতিবেদন পেলে সেটি পর্যালোচনা করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার কোন অন্যায়ের পক্ষে থাকবে না। এদিকে, আরিফুলের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশসহ কুড়িগ্রাম জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ চলছে ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক