বরিশালের বাকেরগঞ্জে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে কোমড়ে রশি বেঁধে ৩ শিশু-কিশোরকে প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস সরদার ও তার সহযোগীরা গত রবিবার দুপুরে পৌরসভার ভরপাশা এলাকায় এ ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ। এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ মঙ্গলবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এদিকে শিশু-কিশোর নির্যাতনের ঘটনা জানার পরপরই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন বরিশালের পুলিশ সুপার। এর এক ঘণ্টার মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতার আনার কথা বলেন পুলিশ সুপার।
গত রবিবার পৌরসভার ভরপাশা এলাকার ইমরান সরদার নামে এক যুবকের একটি মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে স্থানীয় তারেক মীর (১৬), হাসান সিকদার (১৪) ও শুভ হাওলাদার (১৩) নামে ৩ শিশু-কিশোরকে ধরে এনে কোমড়ে রশি বেঁধে লাঠি দিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস সরদারের বিরুদ্ধে। এ সময় তার সহযোগী মিজান সহ অন্যান্যরাও ওই ৩ শিশু-কিশোরকে লাথি, কিল-ঘুষি দেয়। এতে তারেক মীরের একটি হাত ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনার পর চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার নামে পুলিশ এবং সাংবাদিক ম্যানেজ করার কথা বলে তারেক ও হাসানের পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকাও আদায় করেন আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস সরদার।
শিশু-কিশোর নির্যাতনের এই দৃশ্য গোপনে মুঠোফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। মুহূর্তে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়।
করোনার মধ্যেও ফোন চুরির অপবাদে শিশু-কিশোরদের কোমড়ে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বরিশালের সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ এবং জেলা উদীচী সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন শিশু-কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ মঙ্গলবার সকালে দেখে তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাকেরগঞ্জ থানার ওসি’কে নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস সরদার ও তার সহযোগী মো. মিজানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার কথা বলেন পুলিশ সুপার।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল