২৭ মে, ২০২০ ১৭:৫৬

পাহাড়ে বিবর্ণ ঈদ

ফাতেমা জান্নাত মুুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে বিবর্ণ ঈদ

পাহাড়ে বিবর্ণ ঈদ। লাগেনি উৎসবের রঙ। নেই কোথাও আনন্দের উচ্ছ্বাস। করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় ম্লান করেছে সমস্ত আয়োজন। তাই আসেননি কোনো পর্যটক। একেবারে পর্যটক শূন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো। অথচ গেলো বছরও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল এ পাহাড়ে। কিন্তু এখন পুরাই ভিন্ন চিত্র। 

ঈদের আমেজ লাগেনি পাহাড়ের গায়। তাই বুকিংও ছিল না পর্যটন মোটেলগুলো। একেবারেই খালি সব হোটেল, মোটেল ও রেস্ট হাউসগুলো। তাতেই বেকার হয়ে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্রে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। কিন্তু এ পাহাড় এখন একেবারে পর্যটক শূন্য। করোনার কলো ছায়ায় ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। বেকার সময় পার করছেন হাজারো পর্যটন শ্রমিক। 

জানা গেছে, জানুয়ারির শুরু থেকে শুরু হয় পাহাড়ে পর্যটন উৎসব। কিন্তু করোনাভাইরাসের (কভিট-১৯) কারণে এবার ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। টানা ৫ মাস ধরে নেই পাহাড়ে কোনো পর্যটক। স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো।  

এক সময় এ পাহাড়জুড়ে জমজমাট ছিল ভ্রমণ পিয়াসুদের আনাগোনায়। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে হাজারো পর্যটক ছুটে আসতেন সবুজ পাহাড় ও নদীঘেরা মনোরম প্রকৃতির লীলাভূমি রাঙামাটিতে। বিশেষ করে ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়ে বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের লম্বা কর্মজীবনের নানা টানাপোড়ান জনিত জটিলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আনন্দ আর উচ্ছ্বলতায় ভরাতে। 

আর এ পাহাড়ের স্নিগ্ধতা ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিত তাদের টানা বিরক্তি, ক্লান্তি ও ক্লেষজনিত কর্মময় জীবন। কিন্তু তা এবার শুধুই কল্পনা। 

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌযান ঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানান, পর্যটক নেই, তাই ব্যবসাও নেই। নৌযান ঘাটের প্রায় শতাধিক মানুষ বেকার রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে এখন আর কেউ নৌ ভ্রমণ করেন না। করোনার কারণে সব কিছুতেই ধস নেমেছে।  

অন্যদিকে, পাহাড় সেজেছে নতুন রূপে। সবুজ পাহাড়ে একপশলা বৃষ্টিতে দোল খেলছে সাদা মেঘের ভেলা। একই সাথে পাহড়ের ভাঁজে ভাঁজে হরেক রঙের ফুলের মেলা। পাখ-পাখালির নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। প্রকৃতি যেন শান্ত, স্নিগ্ধ আর কোমলতার রূপ নিয়েছে। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।   

রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, দেশে করোনাকালের শুরু থেকে বন্ধ রাঙামাটিতে পর্যটক আসা। তাই পর্যটন রাজস্ব খাতায় আয় কমে গেছে। এবার ঈদ উৎসবেও পর্যটক আসেনি পাহাড়ে। নেই কোনো বুকিংও। করোনার দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত স্বাভাবিক হবে না পর্যটক ব্যবসা। 

প্রসঙ্গত, রাঙামাটি জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও উপভোগ্য স্থান। গড়ে উঠেছে অনেক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। এখন ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের বেড়ানোর বড় সুযোগ ছিল ঈদের ছুটিতে। 

রাঙামাটির মূল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে রয়েছে দৃষ্টিকাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ, কটেজ ও মোটেল। পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে পর্যটকদের আনন্দ ও মনোরঞ্জন জোগানোর অসংখ্য নৈসর্গিক আবেশ ও দর্শনীয় অনেকগুলো স্থান ও স্পট রয়েছে। সরকারি পর্যটন মোটেল ছাড়াও ডিসি বাংলো, পেদাটিংটিং, সুবলং ঝর্ণা ও পর্যটন স্পট, টুকটুক ইকো ভিলেজ, গিরিশোভা ভাসমান রেস্তোরাঁ, পৌর পার্ক, সুখী নীল গঞ্জ, উপজাতীয় যাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, বীরশ্রেষ্ট মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধসহ মনোরম ও নয়নাভিরাম স্পট ও স্থাপনা সত্যিই যে কোনো পর্যটককে সহজেই কাছে টানে। শিহরিত করে তোলে স্বচ্ছ কাপ্তাই হ্রদের জলে নৌ বিহারের মতো রোমাঞ্চকর নৌ-ভ্রমণ। আর এসব পর্যটন স্পটগুলো এখন পুরোপুরি ফাঁকা। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর