আগে যে কোন অবৈধ যৌন সম্পর্ক বা পতিতাবৃত্তির অপরাধে জেলায় দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় (গণউপদ্রপ) এবং মহানগর এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিনেন্সে অভিযুক্তদের লঘু দণ্ড হতো। এখন থেকে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরাসরি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর আওতায় বিচার হবে। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছর দণ্ডের বিধান রয়েছে। যা জামিন অযোগ্য অপরাধ। যারা পতিতা সরবরাহ করবে বা যে স্থানে এই অপরাধ সংঘটিত হবে সেই বাসা, ফ্লাট বা হোটেলের মালিকও এই শাস্তির আওতভুক্ত। পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে এই ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবে।
আজ শনিবার সকালে বরিশালে জুম কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত এক পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি সভায় নতুন এই আইন সম্পর্কে সংশ্লিস্টদের অবহিত করেন বিশেষ অতিথি বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল হোসেন।
বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কবির উদ্দিন প্রামানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র জেল ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম।
জুম কনফারেন্সে বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন বলেন, অনেক সময় বিদেশে নারীরা শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। দেশে বা বিদেশে যেখানেই এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হবে সেটা দেশেই সংঘটিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। অভিযুক্ত আসামি দেশে বা বিদেশে থাকুক বাংলাদেশেই মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন-২০১২ এর আওতায় তার বিচার হবে। আবার কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে দেশে বা দেশের বাইরে মানব পাচারের শিকার হলে তিনি বা তার যে কোন স্বজন তার নিজ এলাকার থানা বা সংশ্লিস্ট ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন। এমনকি পাচারের জন্য কোন স্থানে জড়ো করা হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গ্রেফতার করতে পারবেন।
বিদেশে সংঘটিত এই ধরনের অপরাধ তদন্তের জন্য সংশ্লিস্ট তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রের খরচে সংশ্লিষ্ট দেশে যেতে পারবেন। মানব পাচার অপরাধের ক্ষেত্রে কোন ভুক্তভোগী বা সাক্ষী দূরবর্তী কোন স্থানে বা বিদেশে অবস্থান করলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে রেডর্ককৃত কথপোকথন বা ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে সরাসরি গৃহীত হবে। তাকে সশরীরে ট্রাব্যুনালে যেতে হবে না। বিদেশে অবস্থানকালে যৌন বা শ্রম শোষণ হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য উপাত্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে সরাসরি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
সরকারের যে কোন বিভাগের কর্মকর্তা এবং দেশে ও দেশের বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ব জাহাজ ও বিমানে কর্মরত কোন কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মানব পাচার অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ আইনে সহযোগিতা করতে বাধ্য। কেউ এই বিধি অমান্য করলে তাৎক্ষণিক ট্রাইব্যুনাল তাকে জরিমানা এবং বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবেন।
সভায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ আহমেদ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম আহমেদ, মো. আনিচুর রহমান ও পলি আফরোজ, মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোক্তার হোসেন, উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. খায়রুল ইসলাম, উপ-কমিশনার (গোয়ন্দা) মো. মনজুর হোসেন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন, কোতয়ালী থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মালেকসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিচারকরা বিভিন্ন মামলার সাক্ষী আদালতে না আসায় বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান। বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে সাক্ষীদের যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের তাগিদ দেয়া হয়।
বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধসমূহ মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এই অপরাধের ব্যাপকতার কারণে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চরমভাবে অবনমন হচ্ছিলো। এমন অবস্থায় মানব উন্নয়ন সূচকের মানদণ্ড স্বাভাবিক রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ সরকার এক গেজেটের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা