১৮৬২ থেকে ২০২০। সুদীর্ঘ ১৫৮ বছর। এমন পথ পরিক্রমায় আজ কালের সাক্ষী দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের কলকাতা থেকে প্রথমবারের মত ট্রেন এসে থেমেছিল তৎকালিন পূর্ববঙ্গের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতিতে। সেই থেকে এদেশে ট্রেন চলাচল শুরু। এবার সরকার ১৫ নভেম্বরকে রেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। নানা আয়োজনে ঐতিহাসিক জগতি স্টেশনে রবিবার দুপুরে উদযাপন করা হয় এ দিবসটি।
বাংলাদশে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চাল জোনের উদ্যোগে রবিবার দুপুরে স্টেশন চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলওয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল। এ সময় রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে কেক কাটা হয়। উড়ানো হয় পায়রা ও বেলুন। অনুষ্ঠানে রেলওয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম জানান, জগতি ষ্টেশন ভবনের নির্মাণ শৈলী অক্ষুন্ন রেখে এটি পুন;নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি কালের সাক্ষি এ ষ্টেশনটি ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে চিন্তুা-ভাবনা করা হচ্ছে বলেও এ কর্মকর্তা জানান।
জানা যায়, ১৮৪৪ সালে আর. এম স্টিফেনসন কলকাতার কাছে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনি সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। এ কোম্পানি ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। এরপর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। সে সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ববঙ্গের প্রথম রেল স্টেশন জগতি। পরে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি থেকে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার পদ্মানদী তীরবর্তী গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হয়। সে সময় মানুষ কলকাতা থেকে ট্রেন করে জগতি স্টেশন হয়ে গোয়ালন্দঘাটে যেতেন। সেখান থেকে স্টিমারে পদ্মানদী পেরিয়ে চলে যেতেন ঢাকায়। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে দেশের সেই প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি। পাকিস্তান আমলে কুষ্টিয়া চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে আখ পরিবহনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত এ স্টেশন।
কুষ্টিয়ার আশপাশের জেলাগুলোর জন্য ট্রেনে করে আনা খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রীও খালাস হতো এই জগতি স্টেশনে। তবে আজ ‘সেই রামও নেই, সেই অযধ্যাও নেই’ অবস্থা হয়েছে ইতিহাস খ্যাত জগতি রেলওয়ে স্টেশনের। লোকবল সংকট আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে স্টেশনটি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভবনগুলো আজ ধ্বংস প্রায়। বর্তমানে ওই স্টেশনে দুজন গেটম্যান ছাড়া আর কোনো কর্মচারী নেই। রাত নামলেই সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তারা এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রেল স্টেশনটির ভবনগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক এই স্টেশনটিকে টিকিয়ে রাখার দাবি তাদের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল