মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টমেটো চাষে ভরে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। উপজেলার ছয়শ্রী, উত্তর তিলকপুর, পূর্ব তিলকপুর, জামিরকোনা, ঘোড়ামারা, কান্দিরগাঁও, ননীয়ারপাড়, বনগাঁও, কাঠারকান্দি, আদমপুর, হিরামতী, দেবীপুর, কুশালপুর, জাঞ্জলীয়া, ভেলাবিল, পাত্রখোলা ও সুকুর উল্লার গ্রামগুলোতে ফসলের জমিতে শুধু টমেটো আর টমেটো।
এসব গ্রামের জমিতে পা দিলেই চোখে পড়ে সারি সারি টমেটো গাছ। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে টমেটো। কোনো গাছে সবুজ, আবার কোনো গাছে সবুজ টমেটোর গায়ে ধরেছে হলুদ বর্ণ। কিছুদিন পরই এগুলো হয়ে যাবে টকটকে লাল।
জানা যায়, কৃষিনির্ভর এসব গ্রামের মানুষেরা একসময় আখ, আলু ও বেগুন চাষ করতেন। এতে বছরের ছয় মাস তাদের সংসার একটু ভাল চললেও পরের ছয় মাস চলতো অভাব অনটনে।
তবে এখন আর তাদের সেই অভাব নেই। টমেটো চাষ ও টমেটোর নার্সারী বদলে দিয়েছে এসব গ্রামের মানুষের জীবনমান। এক সময়ের অসচ্ছল পরিবারগুলো আজ ভরে উঠেছে সচ্ছলতায়।
ছয়শ্রী গ্রামের কৃষক জহুর আলী জানান, ২০১০ সাল থেকে তারা টমেটো চাষ শুরু করেন। প্রথম প্রথম তারা টমেটোর চারা কিনে জমিতে রোপণ করতেন। আর গত সাত-আট বছর ধরে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। বাজার থেকে বারী-৪, বারী-৮ ও লাল বাহাদুর জাতের বীজ কিনে প্রথমে চারা উৎপাদন করেন। পরে সেই চারার সাথে বন বেগুনের গ্রাফটিং করেন। এই চারা অসময়ে চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
বর্তমানে তারা ৮০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করছেন। তাদের নিজেদের উৎপাদিত চারার বিষেশত্ব হলো এই গ্রাফটিং চারা সাত মাস ধরে ফল দেয়। গাছে ফলনও বেশি হয়। তাদের উৎপাদিত চারা তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন।
তিনি আরো বলেন, তাদের গ্রামের ২০০ পরিবারের মধ্য ১৫০ পরিবারই এখন বারো মাস টমেটো চাষ করছেন। এতে তাদের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
ওই গ্রামের কৃষক মদরিছ মিয়া বলেন, টমেটো চাষ করেই তিনি তার ভাই জয়নাল মিয়াকে ওমান পাঠিয়েছেন।
চলতি বছরে মিনহাজ মিয়া শুধু টমেটোর চারা বিক্রি করেই ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। আর চারা বিক্রি করে সাহাদত মিয়ার লাভ হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর তিলকপুর গ্রামের ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ বিক্রি করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকার চারা।
ননিয়ারপাড়ারে আব্দুল মতিন বলেন, আগে খুব কষ্টে দিন কেটেছে। টমেটো চাষ করে এখন পেট ভরে দুবেলা ভাত খেতে পারছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতার সিংহ রায় জানান, এই উপজেলায় টমেটো চাষ করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষকরা শীত ও গ্রীষ্ম দুই সিজনেই টমেটোর চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার কৃষকরা প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে গ্রাফটিং টমেটোর আবাদ করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি বলেন, এই করোনাকালেও কৃষকরা গ্রাফটিং টমেটোর চাষ করে বাজার মূল্য অনেক বেশি পেয়েছেন। এতে তাদের পারিবারিবভাবে অনেক উন্নতি হয়েছে। কৃষকরা আগামীতে এই টমেটোর আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই