চারদিকে খড়ের ছাউনি ঘেরা উপরে নিম্নমানের টিন দিয়ে তৈরি একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরের ভিতরে দুটি বিছানায় গাঁদাগাঁদি করে শুয়ে বসে আছেন ৫ জন প্রতিবন্ধী ছেলে। আর একজন সুস্থ ছেলে পড়ালেখা করেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছে সংসার চালাতে। ৫ জন প্রতিবন্ধী ছেলেকে এক ঘরে রেখে বাইরে কুঁড়ে ঘরের বারান্দায় ঘুমাতে হচ্ছে বাবা-মাকে।
এই চিত্র দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে আটগাওঁ ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাওঁ গ্রামের হতদরিদ্র দিন মজুর মোজাম্মেল হকের বাড়িতে।
৮ সদস্যের পরিবারের ৫ প্রতিবন্ধী ছেলে হলো, বিপ্লব(২০), ইশাদ (১৮), রাজু (১২), রিয়াদ (৮) ও আকতারুল (৬)। আর এসএসসি পাস করে আরেক ছেলে সংসারে সহযোগীতার জন্য ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরি নিয়েছে। বাবা মোজাম্মেল হক দিনমজুরের কাজ করেন। আর মা বিউটি বেগমের দিন কাটে প্রতিবন্ধী ৫ সন্তানের পরিচর্যায়। ৬ জন ছেলের মধ্যে ৪ জন বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী, ১ জন বাক প্রতিবন্ধী ও এক ছেলে সুস্থ।
দিনমজুর মোজাম্মেল হক বলেন, অসহনীয় কষ্টের সংসার। এই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। ৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের থাকার একটি শোবার ঘর। সেই ঘরে ছেলেরা থাকে। আমি ও আমার স্ত্রী শীত-বর্ষা সবসময়ে বারান্দায় রাত্রি যাপন করি। ছেলেরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় কিছুটা রক্ষা পেয়েছি। আগে সন্তানদের তিন বেলা খেতে দিতে পারতাম না। এখন ডাল ভাত খায়, কিন্তু অভাব দূর হচ্ছে না। নিজের সম্পদ বলতে ৫ শতাংশ জমির উপরে এই কুড়ে ঘর ছাড়া কিছুই নেই। টাকার অভাবে ঘর করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার চাওয়া সরকারিভাবে আমাকে একটি ঘর করে দিলে প্রতিবন্ধী সন্তানগুলোকে নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে পারি।
মা বিউটি বেগম (৪৫) বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তানগুলোকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। অনেক সময় তাদের জন্য আমার বাবা-মাসহ প্রতিবেশীদের কাছে হাত পাততে হয়।
এব্যাপারে বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. পিয়ারুল ইসলাম জানান, আমার নজরে আসার পর তিন ছেলে সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। আর দুই ছেলে আগে থেকে ভাতা পায়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজসেবার পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীর জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা আছে। মোজাম্মেল হক ব্যবসা করতে চাইলে আমি তা ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল