২৬ নভেম্বর, ২০২০ ২০:৪২

চলন বিলের শুঁটকি এখন ভারতে যাচ্ছে

নাটোর প্রতিনিধি

চলন বিলের শুঁটকি এখন ভারতে যাচ্ছে

নাটোরের শুঁটকি পল্লী।

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সিংড়ার নিংগইন এলাকা। এই পথ অতিক্রমের সময় শুঁটকির ঘ্রাণ উপেক্ষা করা কঠিন। চলন বিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার একমাত্র শুঁটকি পল্লী। এখানকার শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলা পেরিয়ে এখন ভারতেও রফতানি হচ্ছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি চাতালে মাছ কাটা-বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন শ্রমিকরা। বাঁশের মাচায় স্তুপ করে রাখা রয়েছে আধা-শুকনো চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈসহ বাহারী মাছের শুঁটকি।

শুঁটকি পল্লীর চার চাতালের মালিক নাসির উদ্দীন জানান, কয়েক বছর আগের তুলনায় এবার শুঁটকির চাহিদা ও মাছ বেশি। এবার চলনবিলে ব্যাপক মাছের উৎপাদন হয়েছে।

শ্রমিকরা দিনপ্রতি ১৫০ টাকা মজুরিতে আধাবেলা মাছ কাটেন। কেউবা মাছ কাটার পর কিছু বাড়তি টাকার বিনিময়ে চাতালের মাচাগুলো রাখা শুঁটকি রোদে শুকাতে দেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় উল্টে-পাল্টে শুঁটকি বাছাই করেন তারা।

মাছভেদে প্রতিকেজি শুঁটকির দাম সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। রুপচাঁদা মাছের শুঁটকি প্রতিকেজি ২০০০ টাকা, লইট্টা ৭০০ টাকা, ছুঁরি ১১০০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকা, মলা ও কাচকি ৭৫০ টাকা, শৈল ১৫০০ টাকা, টাকি ৭০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, খলসে ও বাতাসি ৩০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, কই ৬০০ টাকা ও টেংরা ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনো প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় স্বাদ ঠিক থাকে।

প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ শুঁটকি বিক্রি হয় এখান থেকে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখান থেকে শুঁটকি কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। এছাড়া এ বছর শুঁটকি চলে যাচ্ছে ভারতেও।

শুঁটকির সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে বর্ষার সময় মাছগুলো ধরে রেখে শীতের শুরুতে শুঁটকি তৈরি করা যেত। একটি মাছ সংরক্ষণাগারই উন্মোচন করতে পারে চলন বিলের মাছ কেন্দ্রিক অর্থনীতির নতুন দিগন্ত।

চলনবিল পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণের সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, চলন বিলের নিংগইনে শুঁটকি পল্লীতে প্রতিদিন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। এবার চলন বিলে মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় শুঁটকির চাতাল এবার জমজমাট। একদিকে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে চলনবিলের শুঁটকির চাহিদা জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লাহ ওয়ালীউল্লাহ বলেন, চলনবিলে মাছের উৎপাদন বিগত দিনের চেয়ে ভালো। গত বছর ২১০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। এবার উৎপাদন আরো বাড়বে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রফতানি হচ্ছে শুঁটকি।

তিনি আরো বলেন, শুঁটকি শ্রমিক ও মালিকদের আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। মৎস্য বিভাগ এ বিষয়ে সজাগ আছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর