তখন রাত সাড়ে ৮টা। একজন দুইজন করে রোগী আসছেন। সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সাড়ে ১০টার দিকে রোগী আসতে থাকে স্রোতের মতো। উপজেলার ছোট হাসপাতাল। জনবল কম। ওষুধের মজুদও বেশি নয়। বেড নেই। শীতের রাত, প্রয়োজনীয় কম্বল নেই।
যারা ফ্লোরে চিকিৎসা নেন তাদের বেশি কম্বলের প্রয়োজন হয়। রোগীদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বিশ্রামে যাওয়া চিকিৎসক ও স্টাফরা ডাক পেয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। নিজেদের নিকট থাকা ওষুধ দিয়ে চেষ্টা শুরু করেন ছয় চিকিৎসক, চারজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, ১৬জন নার্সসহ অন্যান্য স্টাফরা। ওষুধ শেষ হয়ে আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন সিভিল সার্জনকে ফোন করেন। খবর পান পাশের উপজেলা বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা মোঃ মীর হোসেন মিঠু। দুইজনে রাত ১টায় ডায়রিয়ার স্যালাইন, ক্যানেলো নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন।
এখানে রোগীর বমি, ওখানে মল। পরিস্কারে লেগে যান কর্মীরা। সারা রাতে চেষ্টায় পর্যাপ্ত ওষুধ পেয়ে সতেজ হয়ে ওঠেন রোগী। সারা রাতভর আরো রোগী আসে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রোগী এসেছে। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বুধবার রাতের দৃশ্য এটি।
এদিকে হাসপাতালে আগের সাধারণ রোগী ছিলো ১৩জন। সকালে নির্বাচনে হামলায় আহত সাংবাদিক ও এজেন্ট,সমর্থকদেরও সেবা দিতে হয়। এদিনে নির্ঘুম ক্লান্তিহীন ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয় হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফরা।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে এসে একটি রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে পুলিশ, আনসার ও গাড়ির চালকসহ দেড়শতাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১২০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ৬৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
হাসপাতালে ভর্তি কুমিল্লার আদালতে কর্মরত এসআই রনজিত কুমার সরকার জানান, বুধবার দুপুরে ব্রাহ্মণপাড়া আসেন। খাবারের ব্যবস্থা করা হয় উপজেলা সদরের ইত্যাদি রেস্তোরাঁ থেকে। নিজ কেন্দ্র মালাপাড়া গিয়ে প্যাকেটের খাবার খান। বিকেল থেকেই পেট ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। সহকর্মী ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। পুলিশের পোশাক পরে বেডে শুয়ে আছেন। মুখে শুকনো হাসি ঝুলিয়ে বলেন, স্রষ্টা রক্ষা করেছেন। আন্তরিক সেবার জন্য তিনি চিকিৎসক ও হাসপাতাল স্টাফদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন জানান, খাবারে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়েছেন তারা। ১২০ জনের মতো প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি হন ৬৫ জন। রাতে ওষুধের সংকট পড়ে যায়। রাত ১টার দিকে ওষুধ নিয়ে আসেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান মহোদয় ও বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা মো. মীর হোসেন মিঠু সাহেব। একজনকে ঢাকা পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিতৃপ্তির হাসি দিয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের স্টাফদের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমানে সবাই আশংকামুক্ত। সবাইকে সময় মতো সেবা দিতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমরা কুমিল্লা ও বুড়িচং থেকে ওষুধ নিয়ে যাই।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্টাফরা আন্তরিক সেবা দিয়েছেন। তাদের সেবায় রোগীরা দ্রুত সেরে উঠেছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল